সমাজ সংস্কারে অঙ্গীকারাবদ্ধ একদল তরুণ
সাতক্ষীরা থেকে তানজির আহমেদ
ইতিহাস লিখেন বয়স্ক এবং অভিজ্ঞরা কিন্তু ইতিহাস তৈরি করেন তরুণরা। বাংলাদেশের তরুণদেরও রয়েছে সম্বৃদ্ধ ইতিহাস। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তুরের গণ অভ্যুত্থান, একত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে তরুণ বা যুব সমাজ। এতো গেলো আন্দোলনের ইতিহাস। আবার বিভিন্ন সামাজিক দায়বদ্ধতা, বিভিন্ন র্দূযোগ মোকাবিলায় তরুণ যুব সমাজ সকল বাধা বিঘœকে অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় আলোর মশাল হাতে। এমন বহু ঘটনার ইতিহাস আছে।
২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের অনুপ্রেরণায় শিক্ষার্থী, যুবক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিম। শুরু থেকেই টিমের সদস্যরা সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় পুষ্টির প্রাকৃতিক উৎস সংরক্ষণ ও চর্চার বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা, বেতনা বাঁচাও, শান্তি সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ক, শিশু শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে ইত্যাদি প্রভৃতি বিষয়ে প্রচারণা করে এই দল। একই সাথে সুপ্ত লক্ষ্য অনুযায়ী টিমের প্রতিটি সদস্যদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। যেমন-সাধারণ জ্ঞান ও বির্তক চর্চা, সামাজিক গবেষণা প্রশিক্ষণ, ইন্টারনেট ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, দ্বন্দ্ব সংঘাত বিশ্লেষণ কর্মশালা, সুন্দরবন ভ্রমণ, বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষাণী ফরিদা ও অল্পনার কৃষি বাড়ি পরিদর্শন করে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করেছে।
এই দলের সদস্যরা এখন সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে প্রতি মাসে শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে খাতা ও কলম উপহার প্রদান করে শিক্ষার প্রতি তাদের উৎসাহিত করছেন। পত্রপত্রিকায় খবর পড়ে এই কর্মসূচিতে ক্রমান্বয়ে যুক্ত হয়েছে সাতক্ষীরার একজন চিকিৎসক, ব্যাংকার, শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষার্থীসহ আরো কিছু শ্রেণী ও পেশার লোক। এই দলের সদস্যরা উদ্যাপন করেছে বেগম রোকেয়া দিবস। তারা প্রত্যেকেই যেকোন কর্মসূচিতে এখন দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।
একইভাবে সাতক্ষীরা জেলা সদরে তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি দল। শিক্ষিত এই তরুণ জনগোষ্ঠী পড়াশুনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে নানান ধরনের উন্নয়নমূলক সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষামূলক উদ্যোগ দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রেরণা যোগানো। প্রতিমাসে টিমের সদস্যরা নিজেদের টিফিনের ২০০ টাকা করে জমিয়ে তা দিয়ে খাতা ও কলম কিনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেন। এই খাতা ও কলম বিতরণ কর্মসূচির পরে দেশ ও সমাজের আলোকিত মানুষ হয়ে বড় হওয়ার পেছনে যে গল্প তা শুনানো হচ্ছে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। তারাও অঙ্গীকার করেছে ‘নিয়মিত পড়বো খাতা ভরে লিখবো’।
ইতিমধ্যে সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের সদস্যরা বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে খাতা ও কলম সংগ্রহ এবং তৈরি করে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করছেন। উপজেলা প্রশাসন ও বারসিক তাদের উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। জানুয়ারি মাসে বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের উপহার পেল মাছখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে গিয়ে ছোট্ট বন্ধুদের হাতে উপহার হিসাবে তিনটি করে খাতা ও দু’টি করে কলম তুলে দেয়। এ সময় ছোট বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে, ‘তোমাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তোমরা বড় হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে।’
স্বেচ্ছাসেবক মনোভাব নিয়ে শিক্ষিত তরুণের সমন্বয়ে গঠিত সাতক্ষীরার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা দল প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন করে পারস্পারিক সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কাজ করার অঙ্গীকার প্রকাশ করে।