সুরক্ষিত হোক আমাদের প্রাণীসম্পদ
সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে বাবলু জোয়ারদার
শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়ন একসময় মাঠ ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ দেখা যেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ অধিক লাভের আশায় ধান চাষ বন্ধ করে লবণ পানি প্রবেশ করিয়ে শুরু করে আগ্রাসী লবণ পানির চিংড়ি চাষ। সেই সাথে কমতে থাকে কৃষি জমির পরিমাণ ও প্রানি সম্পদের সংখ্যা। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাটিতে লবণাক্ততার বাড়ার ফলে মাটিতে আর আগের মত ঘাস হয় না। এছাড়া ও ধান চাষে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরাশক্তিও কমে যায়, কমে যায় প্রাণীসম্পদের খাদ্য। নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও স্থানীয় জনগোষ্ঠি প্রাণীসম্পদ পালন করে যাচ্ছেন।
মহামারী করোনাকালীন সময়ে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গরুর ক্ষুরা রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ১০০ এর অধিক গরু ক্ষুরা রোগে মারা যায়। যার পরিপেক্ষিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠি বারসিক’র কাছে প্রাণী সম্পদ সুরক্ষায় ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প করার জন্য সহযোগিতার আহবান জানান। এই ভ্যাকনিনেশন ক্যাম্পটি স্থানীয় জনগোষ্ঠি এবং বারসিক যৌথভাবে আয়োজন করে। এই ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প কাঞ্চন রানী বৈদ্যের কৃষিবাড়ি এবং মানিকখালী পূর্বপাড়া গ্রামে প্রশান্ত বৈদ্যের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পে ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিশোধক টিকা প্রদান করা হয়। এই ক্যাম্পে মানিকখালী পূর্বপাড়া গ্রামে ৪৬টি পরিবারের ১৩২টি গরুর ক্ষুরা রোগের প্রতিশোধক টিকা দেওয়া হয়।
এই প্রসঙ্গে শিবপদ মন্ডল (৬১) বলেন, ‘প্রতিবছর একবার করে এই ক্ষুরা রোগের প্রতিশোধক টিকা দেওয়া দরকার। এ রোগে আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। সেই সাথে আমাদের প্রাণীসম্পদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’ কৃষক গনেশ চন্দ্র ম-ল (৪৯) বলেন, ‘আমাদের গ্রামে গরুর ক্ষুরা রোগ যাতে না হয়। সে জন্য এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। আমাদের বিশ্বাস এই ভ্যাকসিন দেওয়া হলে গরুর ক্ষুরা রোগ হবে না। আমাদের গরু গুলো সুরক্ষিত থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প অন্যান্য জায়গায় আয়োজন করলে প্রাণী সম্পদ রক্ষা পাবে এবং প্রাণী সম্পদ পালনে স্থানীয় জনগোষ্ঠির আগ্রহ বাড়বে। সেই সাথে আমাদের উদ্যোগকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য বারসিককে ধন্যবাদ জানাই। এভাবেই সুরক্ষিত হোক আমাদের প্রাণীসম্পদ, টিকে থাকুক আমাদের সকল প্রাণবৈচিত্র্য।’