আগের মত নদীতে মাছও পাওয়া যায় না
মানিকগঞ্জ থেকে কমল দত্ত
বিষ্ণু রাজবংশী বয়স ৩৫ বছর। বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার পুটাইল ইউনিয়নের উত্তর পুটাইল গ্রামে। স্ত্রীর নাম অঞ্জনা রাজবংশী। এক ছেলে সাগর আর এক মেয়ে নদী। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। ছেলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় পড়ালেখা বাদ দিয়ে রাজমিস্ত্রীদের যোগাল দেওয়ার কাজে লেগে যান। অর্থের অভাবে পড়ালেখা করাতে পারেননি বিষ্ণু রাজবংশী ও বিষ্ণু রাজবংশীর স্ত্রী অঞ্জনা রাজবংশী। বিষ্ণু রাজবংশীকে ছোট রেখে মারা যান তাঁর বাবা মা। সেই থেকে মাছ ধরার কাজে লেগে আছেন বংশ পরম্পরাপয় । উত্তর পুটাইল কালিগঙা নদীর পাশেই ২৫Ñ৩০ ঘর রাজবংশী সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করত। নদী ভাঙ্গনের ফলে তারা সরে আসে অনেকটা দূরে। কিছু মধ্য পুটাইল চলে যায় সেখানে ঘরবাড়ি করে। সেখানে জায়গা কিনে ঘরবাড়ি করে বসবাস করতে শুরু করে । তাঁদের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে মাছ ধরা।
এই প্রসঙ্গে বিষ্ণু রাজবংশী বলেন, আগের মত নদীতে মাছও পাওয়া যায় না। বন্যাও হয় না। আগে বন্যা হলে ভালো মাছও পাওয়া যেত। নদীতে জল না থাকায় মাছও থাকছে না। তাছাড়া ছোট ছোট অণুজীবগুলোও মরে যাচ্ছে জলের অভাবে। যেমন শাপলা, শামুক, ঝিনুক। নদীতে কলকারখানার বর্জ্য ফেলাতে জল দূষিত হয়ে গন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা খাওয়া তো দূরের কথা গোসলের জন্য ও ব্যবহার করা যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগের দিনে নদীর মাছ গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। নদীতে বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় অর্থের অভাবে আর ঘর বাড়ি তৈরি করতে পারছিনা। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে নদীতে কাঠা ফেলা হয়। আর ফাল্গুন চৈত্র মাসে কাঠা উঠিয়ে মাছ ধরা হয়। এ প্রক্রিয়া জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত থাকে। তিন দিন পর পর কাঠা তুলে মাছ ধরা হয়। অন্যদিকে রাম রাজবংশী বলেন, ‘একটা জাল বানাতে এক জনের প্রায় এক বছর সময় লাগে। আর বের জাল বানাতে আরও বেশি সময় লাগে। একটা জাল কিনতে ও প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাগে। নদীতে ভালো মাছ পাওয়া যায় না বলে আজ আমাদের সংসারই চলে না।’ বসুদেব রাজবংশী, ‘আগে আমরা জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনরাই মাছ ধরার কাজটা করতাম। এখন অন্য শ্রেণীর লোকজন আমাদের চেয়ে বেশি মাছ ধরার কাজ করছেন। সরকারি সুযোগ সুবিধাগুলো তারাই ভোগ করছেন।’
তারপরে শত প্রতিকূলতার মাঝেও এ জেলে সম্প্রদায় এখনও টিকে আছেন। বংশপম্পরায়ভাবে মাছ ধরা পেশাকে টিকিয়ে রেখেছেন। প্রকৃতিই তাদেরকে বাঁচতে শিখিয়েছে।