মানিকগঞ্জে জলবায়ু সম্মেলন: এ বিশ্বকে মানুষের বাসযোগ্য করার অঙ্গিকার
মানিকগঞ্জ থেকে এম.আর.লিটন
রবি ঠাকুর বলেছেন, “জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা/ ধোলায় যতই হোক তার অবহেলা” এই বিশ্ব সংসারে যা কিছু সৃষ্টি গাছ-পালা, নদ-নদী,পাহাড়-পর্বত, মাটি-পানি, আকাশ-বাতাস এবং অসংখ্য প্রাণের সমারোহ এর সবকিছুই মানুষের কল্যাণে, প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি আমাদের জীবনের সাথে সম্পর্ক রয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। এর কোন কিছুই জীবন থেকে বাদ দেওয়া বা অবহেলা করা যাবে না, আমাদের শিক্ষা অর্জনের জন্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এ সত্য প্রাণ ও প্রকৃতির সকল কিছুই আমাদের শিক্ষালয়। এই শিক্ষা নিয়ে এ বিশ্বকে আমাদের বাসযোগ্য করে যেতে হবে-এ আমাদের অঙ্গিকার।
আজকে আমরা আর একটি সত্যের সামনে, “প্রকৃতিক বিপর্যয়, মনুষ্যসৃষ্ট নানা উন্নয়ন দুর্যোগ, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার পাশাপাশি আজ জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আরেক যন্ত্রনার মুখোমুখি।” এই অস্থিরতা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এগিয়ে আসার প্রত্যয় নিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করি, পরিবেশ ও জীবন সুস্থ রাখি, জীবাশ্ম জ্বালনি হবেই শেষ সুর্য্যরে আলো হবে না নিঃশেষসহ বিভিন্ন স্লোগান নিয়ে বারসিক ও ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগ, খানবাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজ এর যৌথ আয়োজনে, কলেজ ক্যাম্পাসে, ৩০ নভেম্বর, দিনব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও সবুজ জ্বালনি বিষয়ে সম্মেলন, আলোচনা, র্যালি, শপথ বাক্য পাঠ, গান, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলন এ মানিকগঞ্জের চারটি উপজেলা থেকে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী তরুণ ও যুবরা উপস্থিত ছিলেন। বিশাল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনীতে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর অনুষ্ঠানে গাওয়া হয় ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটি। সকলে সমবেতভাবে দাঁড়িয়ে গান গেয়ে, আলোচনা করে, কবিতা পাঠ করে আর শপথ পড়ে সম্মেলনকে বর্ণিল করে তুলে তরুণ যুবকরা।
সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল তরুণ যুবদের আলোচনা ও প্রত্যাশা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত তরুণরা জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে তাদের কাজগুলো একে একে তুলে ধরে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের তরুণ প্রতিনিধি আব্দুর রহিম, “আমরা চরের মানুষের জীবনমান বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বটগাট, তালগাছসহ চরাঞ্চলে নানাবিধ বৃক্ষরোপণ করেছি। আমরা চরের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনে কি করণীয় তা প্রতিনিয়ত বুঝাতে চেষ্টা করি। আমরা এলাকার বাল্যবিবাহ রোধসহ নানা বিষয়ে মানুষকে সহযোগিতা করে থাকি।”
আলোচনায় বিশিষ্ট পরিবেশ আন্দোলন নেতা ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, “বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই শিক্ষা ব্যবস্থাই একজন মানুষকে পরিবেশ সচেতন করে গড়ে তুলে না।” তিনি যুব ও তরুণদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, “তোমাদের উপর আগামী বাংলাদেশে নির্ভর করে। তোমরা যদি আজ জলবায়ু পরিবর্তনসহ আমাদের দেশের প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় সোচ্চার হও তবে আগামী বাংলাদেশে বাসযোগ্য থাকবে। আর না হলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে আমরা পড়তে যাচ্ছি।”
অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমের সভাপতিত্ত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বারসিক এর বারসিক সমন্বয়কারী সৈয়দ আলী বিশ্বাস, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, শিক্ষক এম. মুজিবুর রহমান কনক, গল্পকার মীর মোখসেদুল আলম, উদীচীর নুরুল ইসলাম, সাংবাদিক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু, প্রগতি লেখক সংঘের শ্যামল কুমার সরকার, যুবক প্রতিনিধি আব্দুর রহিম ও এম.আর.লিটন প্রমুখ প্রমূখ। সম্মেলনে প্রবন্ধ পাঠ করেন-ছাত্র-যুবক প্রতিনিধি লাভলী মাীর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন- বারসিক সহযোগী গবেষক মো: নজরুল ইসলাম ও প্রভাষক রুহুল জামান সুজন।
সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেন, “উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে কিন্তু মানুষ খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আমাদের এই বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের জীবনযাপন করা উচিত। তাই প্রাণ ও প্রকৃতিকে ধ্বংস করে এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখা সম্ভব না।”
বক্তারা আরও বলেন, কৃষিতে রাসায়নিক কীটনাশক এর ব্যবহার কমাতে হবে, পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে, তবেই বিপর্যয় হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। সূর্য আমাদের শক্তির অন্যতম শক্তি এই শক্তিকে সবুজ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবো, ভুগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে হবে, নদী, খাল- বিল দুষণ করা চলবে না, সুন্দরবন ও নদীগুলো বাঁচানো এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা আমাদেরকেই করতে হবে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিছু ছাত্র-যুবকদের বলেন, “আজকের এই সবুজ জ্বালানে ও জলবায়ু সম্মেলনে এসে এমন অনেক তথ্য জানতে পেরেছি, যা আগে জানতাম না, এখন থেকে ্এলাকায় গিয়ে জা¡লানি সমস্যা সমাধানে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ব্যবহার করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জনসচেতনা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ করবো । এখন থেকে এলাকার সংকট ও সমস্যা বুঝার চেষ্টা করবো । আমরা গড়বো সবুজ বাংলাদেশ ।”
সম্মেলন শেষে কলেকের অধ্যক্ষ সকলকে নিয়ে প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় শপথ বাক্য পাঠ করান।