জ্বালানির যৌক্তিক ব্যবহার করি, সবুজ পৃথিবী গড়ি
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
“জ্বালানির যৌক্তিক ব্যবহার করি, সবুজ পৃথিবী গড়ি”-এই শ্লোগানে প্রত্যয়ী হয়ে রাজশাহী শহরের আগ্রহী তরুণরা নিজেদের স্কুল ও বাড়িতে শক্তির অপচয়রোধে গ্রহণ করেছেন নানান উদ্যোগ। তারা স্কুলের পাশাপাশি, পাড়া-প্রতিবেশিসহ এলাকার সর্বত্র পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষায় সবুজ জা¡লানি সুরক্ষা ও জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমানোয় নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছেন ।
কিন্তু উদ্যোগ আর সমস্যাগুলো যখন তৃণমূল মানুষের মতো করা হয়ে উঠেনা, তখন সেটি শুধু ক্যাম্পেইনই থেকে যায়। হাজার হাজার বছর প্রকৃতিকে ব্যবহারের ফলে গ্রাম এবং শহরের দারিদ্র মানুষগুলো জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। পুকুর, নদী তথা জলাভূমি যখন ধ্বংস করা হয় তখন সেই মানুষগুলোরই বেশি কষ্ট হয় যারা এসবের উপর বেশি নির্ভরশীল। মানুষের এসব সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার দায়িত্ব তরুণরা অনেকসময় নিয়েছেণ। তেমনি কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন রাজশাহী শহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেহেরচন্ডী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ।
স্কুলটির শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং বারসিক’র যৌথ উদ্যোগে গত বছর থেকে জ্বালানির অপচয়রোধ এবং স্কুল ক্যাম্পাসকে সবুজ ক্যাম্পাস করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। তারা বিভিন্ন সময় জ্বলানির অপচয়রোরোধে ক্যাম্পেইন, আলোচনা সভা, সবুজ বিতর্ক, রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এসেছে। সবুজ মন এবং সবুজ চর্চাসহ সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা পরিবেশ ও সবুজ জ্বলানি নিয়ে লিখালেখির অংশ হিসেবে তারা একটি দেয়ালিকা প্রকাশ করেছেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত লেখালেখি করেন। স্কুল থেকে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ করে একটি সোলার প্যানেল সংগ্রহ করেছেন শিক্ষকরা। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করায় সেখানে বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে আর যার ফলে বিদ্যুৎ বিল তুলনামূলক কম আসে। শিক্ষার্থী-শিক্ষকগণ নিজেদের ক্যাম্পাসকে জ্বালানিবান্ধব এবং সবুজ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করেছেন। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লাগিয়েছেন নানা রকমের ফুলের গাছ। শুধু তাই নয় তারা নিজেদের ক্যাম্পাসকে নিজেরাই সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন।
ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ক্যাম্পাসের বাইরে নিজের বাড়িতেও জ্বালানির অপচয়রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। প্রতিমাসে শিক্ষার্থীরা নিজের বাড়িতে বিদ্যুৎতের অপচয়রোধে কাজের একটি রেজিষ্টার মেইনটেইন করেন। স্কুলে সেই রেজিস্টারে নিজের পরিবারের মাসভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য সংরক্ষণ করেন। প্রতিমাসে এবং তিনমাস পর সেটি র্যাংকিং করা হয়। যে শিক্ষার্থীর পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহারে অনেক সচেতন হয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। স্কুল থেকে নিজের বাড়িতে এভাবে জা¡লানির অপচয়রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীগণ। এ বিষয়ে স্কুলটির শিক্ষার্থী মো. শান্ত ইসলাম বলেন, “আমরা বিগত বছর থেকে জ্বালানি বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, রচনা প্রতিযোগিতা, বির্তক প্রতিযোগিতা করেছি। একটি দেয়ালিকাও প্রকাশ করি সেখানে নিয়মিত জ্বলানি, পরিবেশ ও নিজস্ব সংস্কৃতির বিষয়ে নিজেরা লেখি।” তিনি আরো বলেন, “আমরা দিনে দিনে নিজের স্কুলে জ্বালানি ও পরিবেশ সচেতন হয়ে নিজেদের বাড়িতেও তা মা বাবা, ভাইবোনদের সাথে আলোচনা করেছি, তারাও বিষয়টি পছন্দ করেছে। আমরা এখন নিজের বাড়িতেও জ্বালানির অপচয় করিনা।”
এভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্কুল ও পরিবারে জ্বলানীর যৌক্তিক ব্যবহারে ছাড়াও রাজশাহী নগরের মানুষদের জ্বালানি সচেতনতায় বিভিন্ন ক্যাম্পেইনও করে থাকেন। সমমনা অন্যান্য তরুণ সংগঠনগুলোর সাথে যৌথ উদ্যোগে তারা সাইক্লিং ক্যাম্প, হ্যান্ডবিলি বিতরণসহ রাস্তায় রাস্তায় পথসভা করেও থাকেন। এই প্রসঙ্গে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “দিনে দিনে শিক্ষার্থীরা সচেতন হয়ে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শুধু তারাই নয় আমরা শিক্ষকগণও এখন জ্বালানি সচেতন হয়েছি। এখন অযথা আর ফ্যান চলতে দেয়া হয় না, পানির সাওয়ার আর খুলে রাখা হয় না।”
নদী ও পরিবেশ গবেষক মো. মাহবুব সিদ্দিক বলেন, “আমাদের রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চল পানি সংকটাপন্ন একটি অঞ্চল। এখানে একসময় অনেক নদী নালা, খাল বিল ছিলো, ছিলো অনেক পুকুর। কিন্তু দিনে দিনে নানাভাবেই এগুলো ধ্বংস হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মাটির নীচ থেকে পানি তুলে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ ও গরিব মানুষ আরো সমস্যায় পড়ছে।” তিনি বলেন, “প্রকৃতি, পরিবেশ, এবং নিজের এলাকার জ্বালানি সুরক্ষায় তরুণ শিক্ষার্থীরা যে উদ্যোগ গ্রহণ করছেন তা আগামীর জন্যে ভালো। আগামীতে সবুজ জ্বালানি, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় এই তরুণরা আরো ভূমিকা পালন করবে।”