প্রতিটি অচাষকৃত উদ্ভিদই এক একটি ঔষধ

সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল ও রামকৃষ্ণ জোয়ারদার

জয়াখালী নারী সংগঠনের উদ্যোগে ও বারসিক’র সহযোগিতায় গত ২ ডিসেম্বর শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের জয়াখালী গ্রামে অচাষকৃত উদ্ভিদের রান্না প্রতিযোগিতা ও পাড়া মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রান্না প্রতিযোগিতায় জয়াখালী গ্রামের ১১ জন কৃষাণী ও একজন কৃষক এবং একজন শিক্ষার্থীসহ মোট ১৩ জন অংশগ্রহণ করেন।

রান্না প্রতিযোগিতা কর্মসূচিতে খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করেন গ্রামের প্রবীণ কৃষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছাড়াও বারসিক কর্মকর্তা সাথে ডিয়াকোনিয়া সুইডেনের প্রতিনিধি কারিনা, বাংলাদেশ প্রতিনিধি মাজারুল ইসলাম ও বারসিকের সমন্বয়কারী পাভেল পার্থ। অনুষ্ঠানে ডিয়াকোনিয়া সুইডেনের প্রতিনিধি কারিনা বলেন, ‘এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ ধরনের কর্মসূচি চালু রাখার কথা জানান এবং এ ধরনের কাজের সাথে থাকার কথা জানিয়েছেন।’

pic-2

দিনব্যাপি উৎসবমূখর পরিবেশে অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রাপ্তিস্থল ও গুণাবলী বিষয়ে বিভিণœ ধারনা প্রদান করেন প্রবীণ ব্যক্তিরা। রান্না কর্মসূচির মধ্যে ছিলো ১৩ প্রকারের অচাষকৃত উদ্ভিদ ভিন্নভাবে রান্না। ৮ সদস্যের বিচারক মন্ডলী রান্নাগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে ফলাফল ঘোষণা করেন। রান্না অনুষ্ঠানে বুনো আমড়া রান্না করে প্রথম স্থান অধিকার করেন খাইরুন্নেছা, কচু শাক রান্না করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন শিক্ষার্থী সুমা পারভীন এবং অম্বল মধুর খাটা রান্না করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মনোয়ারা বেগম।

pic-3
রান্না প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী কৃষাণী খায়রুন্নেছা বলেন, “আমার পরিবারে মাসে প্রায় ১৫ দিন অচাষকৃত কোন না কোন শাক থাকে। এগুলো প্রাকৃতিকভাবে হয়ে থাকে। এতে কোন রকম সার কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। আমি সব সময় আমার ছেলের বৌদের এবং অন্যদের এ শাক খাওয়ার কথা বলি যে এতে প্রচুর ভিটামিন আছে আমরা যেন এ শাকগুলোকে অবহেলা না করি।”

pic-4
অন্যদিকে অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলায় ৫৪ ধরনের অচাষকৃত শাক ও ঔষধি গাছ সংগ্রহ করে স্টল সাজানো হয়। এক এক স্টলে একজন করে প্রতিনিধি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসেন। পাড়া মেলায় ৫৪টি অচাষকৃত শাক ও ঔষধি সংগ্রহ করে প্রথম হন শিক্ষার্থী সজিব, ৪৮টি সংগ্রহ করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন নারগিস পারভীন এবং ৩৩টি সংগ্রহ করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন কৃষক শাহীন আলম।

pic-5
পাড়া মেলা অংশগ্রহণকারী কৃষানী মনোয়ারা বেগম বলেন, “এসকল উদ্ভিদ এক একটি ঔষধ যা বিভিন্নভাবে আমরা বাজার থেকে কিনে খাই। এগুলো না থাকলে তো আর ঔষধ তৈরি হতো না। যতই দিন যাচ্ছে এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এলাকাতে এরকম অনুষ্ঠান আরো হওয়া জরুরি।’ কর্মসূচি উপলক্ষে অংশগ্রহণকারীদের নিকট অনুভূতি জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি শাহিদা বেগম বলেন, ‘আমি অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি কিন্তু কোনদিন এরকম কর্মসূচি দেখিনি। আমরা তো এগুলো ভুলেই গিয়েছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এগুলো সম্পর্কে তো কিছুই জানে না। আমাদের কৈখালী ইউনিয়নে প্রত্যেক ওয়ার্ডে এরকম কর্মসূচি আয়োজন করতে হবে। তাহলে সকলে সচেতন হবে এবং সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে।’

happy wheels 2

Comments