সাধারণ এক গ্রামের মেয়ের সাফল্যের কথা

সাধারণ এক গ্রামের মেয়ের সাফল্যের কথা

সাতক্ষীরা থেকে সোনিয়া আফরোজ
গ্রামের খুবই সাধারণ একটা মেয়ে সুরাইয়া পারভিন। সে একজন নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। মেয়েটির বাবা একজন সামান্য রিকশা চালক। তিনি যা রোজগার করেন তা দিয়ে মেয়েটির পরিবারে ৫ সদস্যের দুবেলা ঠিকমতো খাওয়া হয় না। পরিবারের দীনতা থাকা সত্ত্বেও মেয়েটির লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে দারিদ্র্যও হার মানতে বাধ্য হয়েছে।

Suriaya Parvin

প্রায়ই সে স্কুলে যেতো না খেয়ে। কারণ বাড়িতে চাল নেই, রান্না হয়নি, ঘরে খাওয়ার মতো কোন খাবারও নেই। এই দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে চেষ্টার মাধ্যমে মেয়েটি ৫ম শ্রেণিতে ও ৮ম শ্রেণিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মেয়েটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো করতে পারলো না। তার পারিপার্শিক অবস্থাও মসৃণ ছিল না; ছিল বন্ধুর প্রকৃতির। মেয়েটির আত্মীয়-স্বজনরাও তাকে লেখাপড়ার জন্য নিরুৎসাহিত করতো। মেয়েটি তার লেখাপড়ার ব্যয় বহন করার জন্য এক পরিবারের বাচ্চা দেখাশোনা করতো। তারাই মেয়েটির লেখাপড়ার ব্যয় বহন করতো।
মেয়েটির বাবা মেয়েটিকে লেখাপড়া করাতে চাইতো না। লেখাপড়া করতে দেখলে মেয়েটির বাবা তাকে মারতো। মেয়েটির বাবা রাতে ঘুমিয়ে পড়লে মেয়েটি মোবাইলের আলোতে পড়তো। সে যখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে তখনও তার বই কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না। সে তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে বইগুলো পড়তো। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মেয়েটি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তার জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু পড়ার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। ভাবতে ভাবতে তার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে এটা ভেবে যে কীভাবে সে তার টাকা যোগাড় করবে? সে এলাকার বিত্তশালীদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানালো এবং আশানুরূপ সাহায্য পেল।

সে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় গেল। কিন্তু ঢাকাতে তেমন থাাকার কোন ব্যবস্থাও ছিল না তার। অনেক কষ্টে শামসুন্নাহার হলে থাকার ব্যবস্থা হয় তার। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো তখন দেখা যায় মেয়েটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে ১২৩ তম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে ১২২ তম স্থান লাভ করেছে। দারিদ্র্য তার জীবনের বড় বাঁধা হলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ সে যথাযোগ্য মর্যাদা লাভ করেছে।

অনেক বিপদ এসেছে তার জীবনে, কিন্তু কোন কিছুই তাকে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে বাঁধা দিতে পারেনি। তার জীবনের লক্ষ্য সে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। প্রশাসন বিভাগে চাকরি করে সে সাধারণ মানুষের সেবা করতে চায়। মেয়েটির জীবনের পরিশ্রমের সঙ্গী হয়ে ছিল তার মা। একমাত্র তার মা তাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। মেয়েটি সাবলম্বী হয়ে তার মায়ের সকল দুঃখ কষ্টের অবসান ঘটাতে চায়।

happy wheels 2

Comments