সংসারের কাজ সেরে সেলাই কাজ করি
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মো. মুকতার হোসেন
হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামচরে সামেলা বেগমের বাড়ি (৩৯)। লেখাপড়া ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত। বিয়ের পর থেকে সাংসারিক কাজের পাশাপাাশি গরু ছাগল পালন, বসতবাড়িতে শাক সবজি চাষ এবং কৃষি কাজে স্বামীর সাথে সহযোগিতা করেন। ২০১৫ সালে পাটগ্রামচরে হরিরামপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্তৃক আয়োজিত এক মাসমেয়াদী পোশাক তৈরি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২০ জন নারী নারী সেই সেলাই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে সামেলা বেগম একজন।
লেখাপড়া কম জানা থাকলে কাজের প্রতি মনোযোগ আর ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল রয়েছে সামেলা বেগমের। তিনি সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। সামেলা বেগম বলেন, “পোশাক তৈরির কাজ আমি শিখতে পারব। প্রথমে আমি সাহস পাইনি। আজ নিজ হাতে বেলাউজ, পেটিকোট, ছোট ছেলে মেয়েদের প্যান্ট, জামা তৈরি করতে পারছি। আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। আর সেই ভালো লাগার বিষয় থেকে ৬০০০ হাজার টাকা দিয়ে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করি।”
প্রথমে তিনি নিজের পরিবারের সদস্যদের পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন। তারপর আত্মীয়স্বজনের। এরপর গ্রামের মানুষের অর্ডার অনুযায়ী কাজ নেন। আমার সংসারের সমস্ত কাজ সেরে মাসে ৩০০০ টাকা আয় করেন। সামেলার সেলাই কাজ করে উপার্জিত টাকা নিজের ছেলে মেয়ের পোশাক, খাতা কলমের খরচ করা কাজে ব্যয় হয়। ঈদে পরিবারের সদস্যদের জামা কাপড় কেনা, এলাকায় মেলা বাণিজ্য হলে নিজেই টাকা খরচ করেন। তিনি বলেন, “সেলাইয়ের কাজ শুরুর পর থেকে আমার স্বামীর কাছে আর টাকা পয়সা চাওয়া নিই না। সংসারে খরচ কমাতে আমি সহযোগিতা করছি।”
নিজের পরিবারের কাজ সেরে অনেক সময় বসে সময় কাটান সামেলা। কিন্তু এখন আর বসে থেকে সময় নষ্ট করতে রাজি নন। সময় পেলে বসে যান সেলাইয়ের কাজে। গ্রামের মেয়েরা বেশির কাজ সামেলার কাছে নিয়ে আসে। বিশেষ করে মেয়েদের কাজ তার কাছে বেশি আসে। সামেলার কাছ থেকে গ্রামের আলো আক্তার, চায়না, শেফালী, রাজিয়া সেলাই কাজ শিখে তারা এখন বাড়িতে পোশাক তৈরি করছে। চরের কিশোরী বয়সের স্কুলের ছাত্রীরা এখন আর হাট বাজারে জামাকাপড় তৈরি করতে যায় না। চরের এখন অনেক নারীই সেলাই কাজ শিখে নিজেদের পোশাক তৈরি করতে পারছেন।