জনপ্রিয় হচ্ছে আট আনার সিংগাড়া!
বাহলুল করিম, সাতক্ষীরা থেকে
বর্তমানে পঞ্চাশ পয়সার প্রচলন আর নেই। অপরদিকে এক টকার নোটের ব্যবহারও প্রায় বন্ধের পথে। সেখানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নে শ্রীরামপুর বাজারের মালেক বিশ্বাসের দোকানে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সিংগাড়া ও পরাটা। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে সিংগাড়া কিনতে। আবার অনেকে আসে এই আট আনার দোকান দেখতে। দিন দিন কদর বাড়ছে মালেক বিশ্বাসের আট আনার সিংগাড়া ও এক টাকার পরটার।
প্রায় ৩০ বছর ধরে ৫০ পয়সা দামে সিংগাড়া বিক্রি হয় মালেক বিশ্বাসের দোকানে। এখানকার ভাজা সিংগাড়া সকলের কাছে বেশ জনপ্রিয়। চাহিদাও আছে বেশ। কড়াই থেকে গরম সিংগাড়া তুলতেই লাইন পড়ে যায় এখানে। আট আনার সিংগাড়ার এতো চাহিদা যে মালেক বিশ্বাস সরবরাহ করে পারেন না। সারাদিনই ভিড় জমে থাকে দোকানটিতে।
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে উৎপাদন খরচ বাড়লেও কখনো বাড়েনি এই সিংগাড়া ও পরাটার দাম। শ্রীরামপুর বাজারের ছোট্ট এই ভাজার দোকানটি স্থানীয়দের কাছে এখন পরিচিত আট আনার দোকান (৫০ পয়সা) নামে। একটি আলুর সিংগাড়া যে কোন দোকানে বিক্রি হয় চার থেকে ১০ টাকায়। অথচ এই দোকানে সিংগাড়া বিক্রি হয় মাত্র ৫০ পয়সায়। সাথে আছে এক টাকার পরাটা ও আলুর চপ।
এ ব্যাপারে শ্রীরামপুর গ্রামের ষাটোর্ধ বৃদ্ধ আমির আলি বলেন, “১৯৭৪ সাল থেকে মালেক ভাইয়ের দোকান থেকে সিংগাড়া কিনি। সেই শুরু থেকেই এখানকার সিংগাড়ার দাম আট আনা। বর্তমানে সিংগাড়ার সাইজ একটু ছোট হলেও কখনো দাম বাড়েনি। এখন কম দামে সিংগাড়া, পরাটা ও চপ বিক্রি করলেও শুনেছি এক সময় এই ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে সে কিছু জমিও কিনেছিল।”
একই গ্রামের অপর বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “ছোট বেলা থেকেই মালেক কাকার দোকান থেকে আট আনায় সিংগাড়া ও আলুর চপ কিনি। এখানে এক টাকা দামের পরাটা দিয়ে পাঁচ টাকার মধ্যে সকালের নাস্তাও করা যায়।”
ঢাকা বিশ^বিদ্যলয়ের ছাত্র ভোমরা গ্রামের আরিফুল বলেন, “ঢাকাতে কারো সাথে যদি বলি আমাদের গ্রামের বাজারে পঞ্চাশ পয়সায় সিংগাড়া পাওয়া যায় তখন তা কেউ বিশ^াস করে না। একবার ঢাকার বন্ধুরা বাজি ধরে মালেক কাকার দোকান দেখতে এসেছিল।”
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ি কামরুল ইসলাম বলেন, “ময়দা ও তেলের যে দাম তাতে আমরা এত কম দামে ভাজা বিক্রি করতে পারি না। তিনি কিভাবে এত কম দামে বিক্রি করেন, তা উনিই বলতে পারবেন। আমার মনে হয় এই ব্যবসা করে উনার লাভ তো হয়ই না উল্টো লোকসান হয়। এখানে এত কমদামে খাবার বিক্রি হয় জেনে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আট আনার দোকান দেখতে আসেন।”
একান্ত আলাপকালে সিংগাড়ার দোকানের মালিক মালেক বিশ্বাস বলেন, “ব্যবসার শুরুতে লাভ বেশি হতো। সে সময় এই ব্যবসার লাভের টাকায় কয়েক বিঘা জমিও কিনেছিলাম আমি। সেই জমি ইজারা দিয়ে এবং সিংগাড়া ও পরাটা বিক্রির লাভের টাকা দিয়েই আমার সংসার চলছে। ছেলেদের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছি এই টাকা থেকে।”
এত কম দামে খাবার বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, “ব্যবসায় লাভ-লোকসান থাকবে তবে আমার দোকানে খাবার তৈরি থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব কাজ আমি একাই করি। আমার কোন কর্মচারি নেই। নিজের দোকান তাই দোকান ভাড়াও লাগে না। এটি আমার বাবার ব্যবসা ছিল। তার রেখে যাওয়া ব্যবসার প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা ধরে রাখার জন্যই মূলত পঞ্চাশ পয়সার এই ব্যবসাটা এখনও চালাচ্ছি। এতে আমার সল্প আয় হলেও পরিবারের সদস্যরা খুশি। যতদিন সামর্থ্য থাকবে ততদিন এই ব্যবসা চালিয়ে যাব। তবে আমার দোকানের কোন খাবারের দাম বাড়বে না।”