ভাষার মাঝেই বাঁচতে চাই
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কারণেই আজ আমরা নিজের ভাষায় কথা বলতে পারছি। নিজের আচরণে, ব্যবহারে, সংস্কৃতিতে সেই ভাষার ব্যবহার ফুটিয়ে তুলতে পারছি। শুধু আমাদের দেশ নয়, সমগ্র বিশ্বে ২১ ফেব্রুয়ারিকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, পাড়ায় অনেক আয়োজনের সাথে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সেই কাজেরই ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে অবস্থিত হাজী ফয়েজ উদ্দিন আকন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রদ্ধার সাথে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৯ পালন করা হয়েছে। উক্ত আয়োজনে শিক্ষার্থী ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। দিবস পালনের আয়োজনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
প্রথম ভাগে একুশের প্রভাতে সকাল ছ’টায় প্রভাত ফেরীর মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী র্যালির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের আঙিনা প্রদক্ষিণ করে। এরপর বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তকব অর্পণ করেন প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকগণ। এছাড়া ঐ বিদ্যালয়ের নিয়ম শৃংখলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য চারটি হাউজ (শাপলা, গোলাপ, জবা ও বেলী) আছে। সেই হাউজগুলোর পক্ষ থেকেও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। পাঁচজন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে একটি করে হাউজ গঠিত। প্রতিটি হাউজ পরিচালনার জন্য আবার একজন করে শিক্ষক রয়েছেন।
প্রভাত ফেরী ও পুষ্প স্তবক অর্পণের পর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে শিক্ষার্থীসহ উপস্থিত সকলে। এরপর আমাদের দেশের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অবনত মস্তকে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপের আয়োজন।
হাজী ফয়েজ উদ্দিন আকন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের দিবস পালনের বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কিত রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রকাশ ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি। প্রভাত ফেরীর পর শুরু হয় দেয়ালিকা উন্মোচন ও উপস্থাপন। একে একে চারটি হাউজ তাদের দেয়ালিকা প্রদর্শন ও উপস্থাপন করে। গোলাপ হাউজের দেয়ালিকার নাম ছিল ভোরের আলো, বেলী হাউজের প্রভাতী, শাপলা হাউজের পরিক্রমা ও জবা হাউজের প্রত্যুষা।
এই হাউজগুলোর দেয়ালিকা প্রদর্শনের পর এর উপস্থাপনা, ভাষার ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ের উপর নম্বর প্রদান করা হয়। নম্বরের দিক থেকে সবচে’ এগিয়ে প্রথম হয়ে যায় শাপলা হাউজের দেয়ালিকা ‘পরিক্রমা’। এই দেয়ালিকার নকশা, স্বরচিত কবিতা ও সম্পাদকীয় বিষয়টি বিচারকদের আকৃষ্ট করে। এর প্রকাশক উক্ত প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহাদী ইসলাম। তার দল দেয়ালিকা থেকে কিছু অংশ পাঠ করে শোনায়।
দেয়ালিকা উপস্থাপনের পর পর্যায়ক্রমে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি, কুইজ প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সে দিনের মতো দিবস পালন সমাপ্ত করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, উক্ত আয়োজনে দেয়ালিকা প্রকাশনায় সহযোগিতা করে বারসিক।
আলোচনা অনুষ্ঠানে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক তুহিন দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সকলকে অভিনন্দন জানান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উক্ত দিবস এর তাৎপর্য উপস্থাপন করে বলেন, ‘এ বিষয়ে পরের দিন সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হবে। তারা যদি সঠিক উত্তর দিতে না পারে তবে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর জন্য আমাদের ঐতিহাসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা বাধ্যতামূলক করেন। এ বিষয়ে সকলকে পাঠ্য পুস্তকের বাইরেও পড়াশুনা করতে বলেন। অবশেষে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।