অপুষ্টিতে ভুগছে রাজশাহী বস্তিবাসীর বেশির ভাগ নারী ও শিশু
রাজশাহী থেকে ব্রজেন্দ্রনাথ
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত কর্র্ণধার। তারা শারীরিক মানসিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিন্তা চেতনা ও মননে যত সমৃদ্ধ হবে আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যত ততই শক্তিশালী হবে। আর একজন শিশুর গর্ভধারণ থেকে শুরু করে বড় করে লালনপালন করেন একজন মা। একজন সুস্থ মা জন্ম দিতে পারে একজন সুস্থ শিশু। কিন্তু যখন শুনতে হয়, ‘তিনবেলা ভাতের যোগার করতে আমাদের হিমশিম থেকে হয়, ছেলেমেয়েদের যন্ত নেব কিভাবে। আমাদের বস্তিতে বেশির ভাগ শিশুরাই অপুষ্টিতে ভুগছে।’ তখন বুঝতে কষ্ট হয় না যে, বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের অনেক মা ও শিশু অপুষ্টির শিকার। রাজশাহী শহরের রাজপাড়া থানার ৭নং ওয়ার্ডের শ্রীরামপুর বস্তির প্রবীণ নারী হামিদা বেগম (৬০) বলেন, ‘আমাদের আশেপাশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক না থাকার কারণে বেশির ভাগ নারী, শিশু, বয়স্ক মানুষ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পাশের সূর্যের হাসি ক্লিনিকে সেবা নিতে যায় তবে সেখানে গরিব মানুষের কাছ থেকেও তারা টাকা নেই।’
সম্প্রতি রাজপাড়া উপজেলার শ্রীরামপুর বস্তিতে শিশুদের ঠান্ডা, সর্দিকাশি, পেটের পীড়া, গ্যাষ্ট্রিক, হাত পায়ে চুলকানী, কিশোরী নারীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা যায়। আর এই সকল স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও রোগ ব্যাধি থেকে লাঘবের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন করা হয়। মেডিকাল ক্যাম্পটি আয়োজন করে স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা ‘শ্রীরামপুর নারী উন্নয়ন’ সংগঠন যেখানে সহযোগিতা করে বারসিক। দিনব্যাপি স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্পের মাধ্যমে শিশু, নারী, বয়স্ক মানুষসহ মোট ১২০ জন মানুষের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্পটি পরিচালনা করেন রাজপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর বিশেষ টিম। স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা শ্রীরামপুর বস্তির আয়শা বেগম বলেন, ‘আমাদের বস্তিতে আমরা কোন সরকারি ঔষুধ ও ডাক্তার আসে না। বেসরকারী ক্লিনিকে গেলে টাকা দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়, যা আমাদের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যায়। তাই আমরা ভালো চিকিৎসা নিতে পারি না।’
মেডিকাল ক্যাম্পের শুরুতেই সচেতনমুলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় অংশগ্রহন করেন শ্রীরামপুর নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভানেত্রী ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনারের স্ত্রী মোসাঃ নাদিরা বেগম, চিকিৎসক ডা. মো. হামিদুর রহমান, উপ-সরকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (ডি এম.এফ এম পি এইচ) ডা. মোসা. জুবাইদা খাতুন, বারসিক রাজশাহীর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলাম, বারসিক রাজশাহীর কর্মকর্তা ব্রজেন্দ্রনাথ।
আলোচনায় নাদিরা বেগম বলেন, ‘আজকে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পের মধ্যে দিয়ে শ্রীরামপুর বস্তির ১২০ জন মানুষ স্বাস্থ্য সেবা নিতে পেরেছেন। এর আগে কখনও আমাদের বস্তিতে স্বাস্থ্য ক্যাম্প হয় নাই।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডা. মো. হামিদুর রহমান বলেন, ‘বেশির ভাগ এখানকার নারী ও শিশু পুষ্টিহীনতার মধ্যে রয়েছেন। গর্ভবর্তী ও দুগ্ধবর্তী মায়েরখাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। বিশুদ্ধ পানি, পয়োঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।’ বারসিক কর্মকর্তা ব্রজেন্দনাথ বলেন, ‘বারসিক পিছিয়ে পড়া, প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বিশেষ করে বস্তিবাসির মানুষের শিশু, নারীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য গ্রাম পর্যায়ে সচেতনমূলক আলোচনা সভা আয়োজন করে। সরকারি-বেসরকারী এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বস্তির বাসীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য যারা কাজ করে তাদের সাথে যোগাযোগ তৈরি করে দেওয়ার কাজ করে আসছে।’