নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিকল্প কর্মসংস্থান ও বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চায়
ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল:
নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বস্তিবাসীরা। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক কর্তৃক আয়োজিত “নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান : সংকট ও করণীয়” শীর্ষক এক কর্মশালায় এমন দাবি জানিয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রতিনিধি ও বস্তিবাসীরা। কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ, সহযোগী প্রকল্প সমন্বয়ক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, সুদীপ্তা কর্মকার, বস্তিবাসী নেতা নুরুজ্জামান, কুদ্দুস প্রমূখ। কর্মশালায় আলোচকরা বলেন, ঢাকা শহর পৃথিবীর জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরমধ্যে বড় সংখ্যক মানুষ হলো নিম্ন আয়ের মানুষ। এই নিম্ন আয়ের মানুষরা বস্তিতে, ফুটপাতে, স্টেশনে, পার্কে এবং কি ভাসমানভাবে বসবাস করে। তাদের নানা ধরণের ঝুঁকির মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হয়ে। আর এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো তাদের কর্মসংস্থান। এই নিম্ন আয়ের মানুষরা আজ এই পেশায়- তো কাল ঐই পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করতে বাধ্য হয়। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নেই তাদের নূনতম নিরাপত্তা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তারা যেমন গ্রাম থেকে শহরে এসে মানবেতন জীবনযাপন করতে বাধ্য হয় এবং একই ভাবে পেশাগত জায়গায় তারা খুব প্রান্তিক জীবনযাপন করে।
কর্মশালা থেকে আলোচকরা আরও বলেন, বস্তিবাসীদের অধিকাংশই নানান ঝুকিপূর্ণ পেশায় কাজ করে। বিশেষ করে বস্তির শিশুরা। এছাড়া বস্তির নারী, পুরুষরাও যে পেশায় কাজ করেন তা দিয়ে তাদের জীবনযাপন সহজ হয় না। বারসিকের গবেষণা থেকে দেখা যায়, বস্তিতে পরিবারের আয় দিয়ে সারা বছর চলতে পারে এমন উত্তরদাতার সংখ্যা ৫৮ ভাগ এবং চলতে পারেন এমন উত্তর দাতার সংখ্যা ৪২ ভাগ। একটি তথ্যে দেখা যায় বিশ্বে জীবনযাত্রা পরিচালনা করার জন্য ব্যয়বগুল শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম স্থান দখল করে রেঘেছে। জীবন নির্বাহ করার জন্য যে জিনিসগুলো অতীব প্রয়োজনীয় তার অধিকাংশই গ্রাম থেকে শহরে আসে। বাসা ভাড়া, খাবার, পোশাক, যাতাযাত, যোগাযোগ, চিকিৎসা এবং বিনোদন বাবদ তাদের আয়ের অধিকাংশ টাকায় খরচ হয়ে যায়। তাদের আয়ের বড় অংশই ৭৪ ভাগ টাকা খরচ হয় চিকিৎসা বাবদ। এরপরই রয়েছে যাতাযাত ১১ ভাগ এবং তারপর রয়েছে শিক্ষা ৯ ভাগ। বাসা ভাড়া বাবদ ১২ ভাগ পরিবারের খরচ হয় মাসে ৩০০০ টাকা, ১১ ভাগ পরিবারের খরচ হয় ২০০০ টাকা এবং ৬ ভাগ পরিবারের খরচ হয় ২৫০০ টাকা।
বস্তিবাসী প্রতিনিধিরা বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে যে সব মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে নতুন পেশায় যুক্ত হয়ে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করছেন, তারা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ না পেয়ে অনেক ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হন। কি কাজ দিয়ে জীবন পরিচালনা করবেন তা ঠিক করাই তাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া পছন্দ মতো কাজ খুঁজে পাওয়াও তাদের জন্য অনেক কঠিন। ফলে শহরে জীবনের শুরুতেই ঝুঁকিপূর্ণ ও স্বাধীনতাহীন কাজে যুক্ত হয়ে জীবন পরিচালনার চেষ্টা শুরু করে। এক কথায় কর্মসংসানের অভাব ও যুতসই কাজের অভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে। কর্মশালা থেকে তারা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো: নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন করে সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, মর্যাদাপূর্ণ কাজের ব্যবস্থা করা। কাজের ক্ষেত্রে বেতন ও বোনাস সঠিকভাবে পরিশোধ করা। বাসাবাড়ীতে কাজের ক্ষেত্রে প্রতিকাজ অনুযায়ী বেতন প্রদান করা। কোন কারণ ছাড়া কাজ থেকে বাদ যাবেনা এবং নূনতম তিন মাস আগে নোটিশ দিয়ে কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সহজ শর্তে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা। বস্তিবাসীদের জন্য জাতীয় বাজেটে কর্মসংস্থানের জন্য পৃথক বাজেট ও বরাদ্দ রাখতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষদের নিয়ন্ত্রণে ও তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে হবে। যেকোন কাজের ক্ষেত্রে কোন বেতন বোনাস আটকে রাখা যাবেনা। নিম্ন আয়ের মানুষদের মালিকানায় ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।