স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে হামিদা আক্তারের সংসারে
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে সেলাই মেশিনে কাপড় সেলাই করে আসছেন হামিদা আক্তার। স্বামী ছিলেন কাঠ মিস্ত্রি। কিন্তু বছর ছ’য়েক আগে স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস এ আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে পঙ্গু। স্বামীর চিকিৎসা খরচসহ সংসারের যাবতীয় চাহিদা তাঁকেই পূরণ করতে হয়।
কিন্তু সারাবছর সমান তালে সেলাই করতে পারেন না। ঈদ বা ধান তোলার মৌসুমে গ্রামের মেয়ে বা বৌয়েরা নতুন জামা কাপড় বানায়। তখনই শুধু একটু বেশি সেলাই করে রোজগার করতে পারেন। এছাড়া বছরের অন্যান্য সময় খুব কম সেলাইয়ের ফরমায়েশ পাওয়া যায়।
আবার অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে যেখানে কাপড় কিনতে পাওয়া যায়, সেখানেই আছে দর্জি। যারা কাপড় কিনে তারা ওই দর্জির কাছেই সেলাই করতে দিয়ে আসে। যদিও হামিদা আক্তার মেয়েদের পরিধেয় সকল পোশাক তৈরি করতে পারেন। তবুও অনেকেই বাজারে গিয়ে কাপড় কিনলে সেখানেই সেলাই করতে দেয়। ফলে হামিদা আক্তারের সেলাইয়ের ফরমায়েশও দিন দিন কমে যাচ্ছিল।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে বারসিক’র পক্ষ থেকে হামিদা আক্তারকে ৮৮ গজ থান কাপড় কিনে দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি অন্যদের জামা সেলাই করার পাশাপাশি কাপড় বিক্রি করছেন। এবং একই সাথে বিক্রির টাকা ও সেলাইয়ের মজুরিও পাচ্ছেন।
বর্তমানে তিনি কাপড় বিক্রি ও জামা সেলাইয়ের লাভের টাকা দিয়ে আরো নতুন নতুন থান কাপড়, মেয়েদের থ্রিপিস, স্কুল ড্রেসের কাপড়সহ মোট ৬৫ গজ কাপড় কিনেছেন। তিনি প্রতি গজ সুতি কাপড় চুয়াল্লিশ) টাকা দরে কিনে ষাট টাকায় করে বিক্রি করেন। এছাড়া মেয়েদের স্কুল ড্রেসের কাপড় ষাট টাকা করে কিনে বিক্রি করেন আশি টাকায়। এছাড়া প্রতিটি ড্রেসের মজুরি হিসেবে পান একশত পঞ্চাশ টাকা।
এছাড়াও মেয়েদের প্রতিটি থ্রিপিস কিনে আনেন দুইশত সত্তর টাকা করে, যা বিক্রি করেন চারশত টাকায়। আর পাশাপাশি সেলাই বাবদ একশত বিশ টাকা করে পান।
নতুন বছর শুরু হয়েছে। পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। আবার যারা নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে তাদেরও চাই নতুন ড্রেস। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান। এখানে যারা অংশগ্রহণ করবে তারাও নতুন জামা তৈরি করবে। তাই হামিদা আক্তার স্কুল ড্রেস ও থ্রিপিস এর বিভিন্ন ধরণের কাপড় কিনে এনেছেন এবং জামা সেলাই করে দিচ্ছেন। এইভাবে থান কাপড়, থ্রিপিস ইত্যাদি বিক্রি ও সেলাইয়ের লাভের টাকায় তাঁর সংসারের চাহিদা পূরণ করছেন। আবার নতুন করে কাপড় কিনছেন।
গ্রামের অনেকেই এখন তাঁর কাছে এসে কাপড় কেনার পাশাপাশি সেলাই করতে দিয়ে যান। সেই টাকা দিয়ে অসুস্থ স্বামীর ঔষধ, পথ্যসহ যাবতীয় খরচ মেটাতে পারছেন। আস্তে আস্তে হামিদা আক্তারের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।