করোনায় শিশুর বিনোদনে গ্রামীন মায়ের বিকল্প আয়োজন
নেত্রকোনার মদন থেকে সুমন তালুকদার:
বিচিত্র্য মানুষের লোকজ্ঞান, গ্রামের নারীরা প্রকৃতি থেকে দেখে দেখে, শিখে শিখে তার জীবনে আসা সমস্যা ও দুর্যোগগুলো সামাল দিয়ে থাকে। তাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো নিজস্ব এই জ্ঞানের মাধ্যমে পরিচালিত করে। দেশে চলছে মহামারি করোনা। দেশটা যেন একটা বন্দিশালা কি গ্রাম, কি শহর। যে শিশু হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেও বুঝে গেছে আমি বের হতে পারবোনা। তারপরও মানুষের জীবন থেমে নেই।
নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের নারী রোজিনা আক্তার তার শিশুদের জন্য তৈরি করেছে বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা। তিনি জানান, এতদিন বোরো ফসল তোলার জন্য ব্যস্ত ছিল সবাই। এখন একটু অবসর। শিশুরা খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকবে কিন্তু এই বাধা নিষেদে তার সন্তান রোহান ও রায়হান বিমর্ষ হয়ে যাচ্ছিলো। তাই তিনি ছেলেদের জন্য তৈরী করলেন মাটি দিয়ে ক্যারাম বোর্ড। ক্যারাম বোর্ডের গুটি বানালেন গুলি দিয়ে আর স্টিকার তৈরি করলে বোতলের মুখ বা কর্র্ক দিয়ে। এখন তারা খুবই খুশি। তিনি বলেন, কাজটা খুবই ছোট কিন্তু এর প্রভাব অনেক বেশি তাদের শিশু মনের জন্য।
এটিই গ্রামীন জীবন, এগুলোই গ্রামীন নারীর উদ্ভাবন। এটিই গ্রামীন জীবনের লোকায়ত প্রযুক্তি, হোক সেটা বিনোদনের জন্য, খাদ্য উৎপাদন কিংবা খাদ্য সংরক্ষণ। সে তার নিজের মত চারপাশকে ব্যবহার করেও গড়ে তোলে তার নিজস্ব সক্ষমতা। সেই সক্ষমতায় কোন বাণিজ্য নেই, আছে শুধু সকলে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। গ্রামীন জীবনের এসব প্রচেষ্টার প্রতিটি পরতে পরতে যুক্ত থাকে মায়া, মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে সকলকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দুর্বার পথচলা। কর্পোরেট বানিজ্য তার দখলের সীমানাকে সম্প্রসারিত করতে গিয়ে গ্রামীন মানুষের স্থানীয় সম্পদ নির্ভর এসব লোকায়ত জ্ঞান ও চর্চার ক্ষেত্রগুলোকেই শুধু নষ্ট করেনি, সেই সাথে নষ্ট করেছে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক ও সম্প্রীতির বন্ধনকে।