‘তুমি এগিয়ে যাও তোমার পথে, নিজে চলার পথ নিজেই সৃষ্টি করো
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
বিভিন্ন বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পাবার প্রতীকি নাম হচ্ছে-জয়িতা। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর থেকে ১০ডিসেম্বর) ও বেগম রোকেয়া দিবস (৯ডিসেম্বর) উপলক্ষে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ নামক ভিন্নধর্মী একটি প্রচারণার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত প্রচারণার অংশ হিসেবে তৃণমূল পর্যায়ে সফল বিভিন্ন নারীদের কার্যক্রমের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, যা অন্যান্য নারীদেরকেও উৎসাহিত করে।
পাঁচটি বিভাগে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এগুলো হলো:
১. সফল জননী নারী
২. শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী
৩. অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী
৪ নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী এবং
৫. সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী।
পাঁচটি বিভাগের মধ্যে উপরোক্ত দুইটি বিভাগে বারসিক, নেত্রকোনা অঞ্চলের নেত্রকোণা সদর উপজেলার লক্ষীগঞ্জ ইউনিয়নের দুইজন নারী ‘জয়িতা’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন, সুলতানগাতি গ্রামের মমতা বেগম-সফল জননী নারী এবং বায়রাউড়া গ্রামের রওশন আরা-শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী।
৯ ডিসেম্বর নেত্রকোণা জেলার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে এই পুরষ্কার প্রদান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিবা রহমান খান শেফালী- মাননীয় সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা আসন। সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাজি মো. আবদুর রহমান-জেলা প্রশাসক, নেত্রকোণা। এছাড়াও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজনীন সুলতানা, পুলিশ সুপার, নেত্রকোণা জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুরষ্কারপ্রাপ্ত জয়িতা নারীগণ।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে জয়িতা নারীগণ সংক্ষেপে তাঁদের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রম সংক্ষেপে তুলে ধরেন। প্রধান অতিথি তাঁর আলোচনায় বলেন, শুধু পুরষ্কৃত নারীগণই আজকের জয়িতা নয়, আমাদের দেশের প্রত্যেকজন নারী নিজ নিজ পরিসরে একেক জন জয়িতা। তিনি সকল নারীকে গ-িতে আবদ্ধ না থেকে উন্মুক্ত প্রান্তরে বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজনীন সুলতানা জয়িতাদের উদ্যেশ্যে বলেন, ‘তাঁরা যেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার জন্য পথ প্রদর্শক হয়ে কাজ করেন। উপস্থিত অতিথিদের আলোচনা শেষে জয়িতা নারীদের মাঝে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।’
আমাদের জয়িতাগণ
মমতা বেগম-সফল জননী নারী
লক্ষীগঞ্জ ইউনিয়নের সুলতানগাতী গ্রামের মমতা বেগম, তাঁর স্বামী একজন গাছ বিক্রেতা। বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের গাছের নার্সারি আছে। এলাকার সকল বাজারে গিয়ে তিনি চারা গাছ বিক্রি করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। মমতা বেগমের বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী আটপাড়া উপজেলার দেওগাঁও গ্রামে। তিনি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। কারণ সে সময়ে এখনকার মতো এতো স্কুল ছিলনা। তিনি যে স্কুলে পড়তেন, সেটি ছিল বাড়ি থেকে অনেক দূরে। তাছাড়া এটা ছিল ভাটি/নীচু এলাকা। যে কারণে বছরের বেশিরভাগ সময়ে পানি থাকতো। নৌকা করে স্কুলে যেতে হতো। অনেকদিন বই খাতা পানিতে পড়ে গিয়ে ভিজে যেতো। তবুও তিনি স্কুলে যাওয়া বাদ দিতেন না। কিন্তু তাঁর মা ভয় পেয়ে এক সময় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও আর স্কুলে যাওয়া হলোনা, লেখাপড়াও হলোনা।
বিয়ের পর দরিদ্র স্বামীর সংসারে এসে মমতা ততক্ষণ নার্সারির কাজ করতেন। আর সুযোগ পেলে বিভিন্ন ধরণের বই পড়তেন। পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের দেখাশুনা করতেন। প্রত্যেকটি সন্তানের পড়াশুনার হাতেখড়ি তাঁর কাছেই হয়। অক্ষর শেখানো থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তিনিই পড়িয়েছেন। অভাবের সংসারে খাওয়টাই ঠিকমতো জুটতোনা। তাই বাড়িতে শিক্ষক রেখে পড়ালেখা করানোর মতো সামর্থ্য তাঁর ছিলনা।কতদিন গেছে শুধু মুড়ি খেয়ে তিনি দিন কাটিয়েছেন কিন্তু সন্তানদের পড়ালেখার কোনো ক্ষতি হতে দেননি। নিজে ছেঁড়া কাপড় পড়েছেন, তবুও তাদের লেখাপড়ার বিষয়ে কোনো চাহিদা অপূর্ণ রাখেননি। নিজে যেহেতু সুযোগের অভাবে পড়তে পারেননি, তাই অভাবের জন্য যেন তাদের পড়ালেখা বন্ধ না হয়ে যায় সেই চেষ্টা করেছেন সব সময়। তিনি বাড়িতে থেকে সারাদিন নার্সারির গাছগুলোর পরিচর্যা করতেন। নতুন নতুন বীজ রোপণ, প্যাকেটে মাটি ভরা, মাটিতে সার মেশানো, গাছে পানি দিতেন। যাতে গাছগুলো ভালো হয় এবং বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করতে পারেন। তাহলে ছেলেদের পড়ার খরচ চালাতে পারবেন। আস্তে আস্তে তাঁর নার্সারির চারা বিক্রি বাড়তে থাকে। স্বামী সুরুজ খাঁ স্থানীয় বাজারগুলোতে গিয়ে চারা বিক্রি করতেন। আবার বিভিন্ন পাইকারগণও বাড়ি থেকে এসে গাছ নিয়ে যেত।
গাছের চারা বিক্রির টাকায় প্রথমে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে পরে সংসারের চাহিদা পূরণ করতেন। সন্তাররাও তাদের মা এবং বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম বিফলে যেতে দেয়নি। তাঁর প্রত্যেকটি সন্তান সব সময় পড়ালেখায় মনোযোগি থেকে ভালো ফলাফল করেছে।
মমতা বেগমের বড় এবং মেজো ছেলে এসএসসি পাশ করার পর ঢাকা চলে যায়। সেখানে গিয়ে এইচএসসিতে ভর্তি হয়। এইচএসসি পাশের পর বড় ছেলে ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। সেখান থেকেই বিবিএ ও এমবিএ করে। বর্তমানে সে ঢাকার উত্তরার এমিন্যান্স কলেজে বিবিএ’র লেকচারার হিসেবে চাকরি করছে। মেজো ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকরি করছে। ছোট ছেলে মাদারীপুর সরকারী পলিট্যাকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা পড়ছে। এক মেয়ে ভাওয়াল কলেজে ফিজিক্স বিষয় নিয়ে অনার্স পড়ে আর ছোট মেয়ে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স এ- ইঞ্জিনিয়ারিং) পড়ছে।
নার্সারির কাজ করে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালানোর পাশাপাশি কিছু কিছু করে টাকা জমিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে কিছু ধানের জমি কিনেছেন। এখন আর খাওয়া খরচের জন্য চিন্তা করতে হয়না। মমতা বেগমের দুই ছেলে এখন রোজগার করছে। তারা তাদের উপার্জনের টাকায় বাড়িতে পাকা ঘর তৈরি করেছেন। আধুনিক সব আসবাবপত্র দিয়ে ঘর সাজিয়েছেন। তাদের মা, বাবার যেন কষ্ট না হয় সেজন্য বাড়িতে সকল সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছেন। এখন আর মমতা বেগমের কোনো কষ্ট নেই।
রওশন আরা-শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী
নেত্রকোণা থেকে মদনপুর যাবার পথে বায়রাউড়া নামক একটি গ্রাম আছে। অনেক বছর আগে পর্যন্ত এই গ্রামের মানুষজন খুব বেশি শিক্ষিত ছিলনা। এর কারণ ছিল গ্রাম থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক দূরে অবস্থান এবং গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ছিল দরিদ্র শ্রেণির। যে কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বেশিরভাগ পরিবারের শিশুদের কাজে যুক্ত করে দেয়া হতো। ফলে শিক্ষার আলো তেমনভাবে ছড়াতে পারেনি। হাতে গোনা কয়েকটি সচেতন পরিবারের সন্তানেরাই পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়েছে। তার মধ্যে রওশন আরা একজন। কৃষক পরিবারের সন্তান রওশন আরা, তাঁর মায়ের উৎসাহ আর নিজের একান্ত প্রচেষ্টায় লেখাপড়া শুরু করেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। ১৯৮৪ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন। এ বছরই নার্সিং এ ট্রেনিং এর জন্য ভর্ত্তি হন। কিন্তু দু’ বছরের মাথায় তাঁর বিয়ে হয়ে যায় পার্শ্ববর্তী গ্রামের সাধারণ কৃষক আ. সাত্তারের সাথে। তাঁর স্বামী তাঁকে আর ট্রেনিং করার অনুমতি দেননি। তাই মাঝপথেই চলে আসতে হয়েছিল। তাঁর মায়ের অনেক ইচ্ছা ছিল নার্স হয়ে তিনি অনেকের সেবা করবেন। কিন্তু স্বামীর আপত্তির কারণে সেটা আর করতে পারেননি।
রওশন আরার স্বামী ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ। সারাদিন আল্লাহর ধ্যান আর জিকির নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর দুটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। রওশন আরার ভাই মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের একটি ছেলে ও একটি মেয়েকে রেখে ভাবীও বিয়ে করে অন্য গ্রামে চলে যায়। এতিম দুটি শিশুকে দেখার মতো কেউ ছিল না। তাই তিনি ভাইয়ের সন্তানদের দেখভাল করার জন্য বায়রাউড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। এবং স্বামী সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন।
রওশন আরার বিয়ের প্রায় ১০ বছরের মাথায় তাঁর স্বামীও মারা যান। একদিন তিনি জানতে পারলেন একটি বেসরকারী সংস্থায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। আবেদন করলেন, চাকরিও হয়ে গেল। লক্ষীগঞ্জ ইউনিয়নের একমাত্র শিক্ষক হিসেবে তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন। এরপর উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
বাড়িতে থেকে আশেপাশের বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াতে শুরু করলেন। তাঁর কাছে তখন গ্রামের অনেক ছেলেমেয়েই পড়তে আসতো। এই বিষয়টি যখন জানাজানি হয় এবং তাঁর আগ্রহের কথা শুনে পার্শ্ববর্তী গিডুরপাড়া গ্রামের একজন ধনী ব্যক্তি স্কুল তৈরির জন্য জায়গা দিলেন। তাঁর জায়গায় ও গ্রামের সকলের সহযোগিতায় ঐ গ্রামে ২০০৩ সালে তিনি একটি স্কুল তৈরি করেন। বেসরকারী সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে স্কুল তৈরির সমস্ত খরচ তিনি নিজে বহন করেন। মাত্র ৭জন ছাত্র নিয়ে প্রথম স্কুল চালু হয়। তাদের জন্য খাতা, কলম তিনিই কিনে দিতেন। গ্রামের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের স্কুলে ভর্ত্তি করার কথা বলতেন। কিছুদিনের মধ্যেই উক্ত গ্রামসহ পাশের গ্রাম থেকেও অনেকেই এই স্কুলে আসতে শুরু করে।
ছাত্র সংখ্যা যখন বাড়তে লাগলো তখন স্কুলটিতে ধীরে ধীরে প্লে, নার্সারি ও কেজি ক্লাসে উন্নীত করলেন। নিজের টাকা খরচ করে স্কুলে টিউবওয়েল, টয়লেট ইত্যাদি স্থাপন করলেন। স্কুলের পরিবেশ দেখে যখন ছাত্রসংখ্যা বাড়তে থাকলো, তখন একার পক্ষে সব ক্লাসে পড়ানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তিনি আরো তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিলেন। কেজি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতেও ক্লাস নেয়া শুরু করলেন। তৃতীয় শ্রেণিতে গিয়ে ছাত্ররা অন্য স্কুলে ভর্ত্তি হতো। খুব কম সংখ্যক ছাত্র নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেও শেষ পর্যন্ত প্রায় ২০০শত ছাত্র এই স্কুল থেকে শিক্ষা লাভ করে। তাঁর অনেক ছাত্রী নেত্রকোণা শহরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্ত্তির সুযোগ পেয়েছে। তাঁর কাছে হাতেখড়ি হওয়া একজন ছাত্রী এসএসসিতে জেলা পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। স্কুলের প্রথম দিকের এক ছাত্র বরিশাল মেডিকেলে পড়ছে। অনেকেই এখন ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ছে। তাঁর কাছে পড়ালেখা করা ছাত্রদের মধ্যে ২/৩জন ছাত্র নেত্রকোণা শহরের ‘খান কি-ার গার্টেন এসোসিয়েশন’ থেকে প্রতিবছর বৃত্তি পেয়েছে। এছাড়া অনেকেই পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে খুব ভালো ফলাফল করেছে। ২০০৩ সাল থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি এই স্কুল চালিয়েছিলেন। উক্ত স্কুলের জমিদাতা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলে কিছু অসাধু লোকের প্ররোচনায় তাঁর পরিবারের লোকজন রওশন আরাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে লাগলো। একসময় তিনি সম্মানের কথা চিন্তা করে স্কুল ছেড়ে চলে আসেন।
গিডুরপাড়া গ্রামের স্কুল ছেড়ে তিনি ২০১৯সালে নিজ গ্রাম বায়রাউড়াতে ‘ঝলক আদর্শ কি-ার গার্টেন’ নামে আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মামার দেয়া ১০ শতাংশ জায়গার অর্ধেকটাতে স্কুল এবং বাকি অর্ধেকটাতে নিজে থাকার জন্য একটি ঘর তোলেন। এই স্কুল ঘরটিও সম্পূর্ণ তাঁর নিজের খরচে স্থাপন করেন। ৭৫জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে এই স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। নেত্রকোণা সদরের উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে স্কুল রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। সরকারি সহযোগিতা হিসেবে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু বই পেয়েছেন। এছাড়া স্কুলের সমস্ত উপকরণ তাঁর নিজস্ব অর্থায়নে সংগ্রহ করা। বর্তমানে করোনার কারণে স্কুলের সকল কার্যক্রম বন্ধ আছে। তাঁর সহযোগি হিসেবে তিনি এই স্কুলে তিনজন শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়েছেন। এই স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। রওশন আরার অবর্তমানে তাঁর মেয়েরা এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন। শুধু বায়রাউড়া গ্রাম নয়, আশেপাশের অনেক গ্রামে তাঁর হাতে তৈরি অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। শুধু তাঁর ছাত্রছাত্রীরা নয়, সকলেই তাঁকে খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখে। অশিক্ষিত, দরিদ্র শ্রেণির ছেলেমেয়েকে শিক্ষিত করার উদ্যেশ্যেই তিনি এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে অনেক নারী আছেন, যারা নিরলস সংগ্রাম করে জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁদের ক’জনের খবর আমরা রাখি। তাঁরা প্রত্যেকেই রোকেয়া, প্রত্যেকেই জয়িতা। শুধু রোকেয়া দিবসে নয় প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে আমরা তাঁদের সম্মান জানাই। তাঁদের জীবন সংগ্রামে সাথী হতে না পারলেও অন্তত এই একটি দিবসকে সামনে রেখে সকল নারী জাতিকে অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা জানাই। আর বলি, ‘তুমি এগিয়ে যাও তোমার পথে, নিজে চলার পথ নিজেই সৃষ্টি করো।’