‘আমাকে পেরেকবিদ্ধ করো না’

রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
‘স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমাণ করেছেন গাছেরও প্রাণ আছে। তাহলে গাছেরও ব্যাথা বেদনা ও কষ্ট আছে। আমরা কেন পেরেকবিদ্ধ করব গাছের বুকে’? উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজিমুদ্দিন বাবু।


মোড়ে মোড়ে যেখানে মানুষের সমাগম হয় এমন স্থানের গাছের যন্ত্রণা বেশি। কারণ এখানকার গাছগুলোকে মুড়ে ফেলা হয় কোন ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপন বা পোস্টারে। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, সে বিজ্ঞাপনগুলো ঝুলিয়ে দেওয়া হয় পেরেক দিয়ে গাছের বুঁকে। কত সহজে বড় বড় পেরেক গেঁথে দেওয়া হয়। গাছ কি কোন কষ্ট পায় না। নাকি আমরা সে কষ্ট অনুভব করতে পারি না। আসলে আমরাই সে কষ্ট অনুভব করতে পারি না। কিন্তু এ কষ্ট অনুভব করেছেন তানোর উপজেলার মোহড় গ্রামের ‘স্বপ্ন আশার আলো যুব সংগঠনের’ সদস্যরা।


নিজেদের সংগঠনের মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত নেন এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করবেন এবং যে গাছগুলোতে পেরেকবিদ্ধ করা আছে সেগুলো অপসারনণ করবেন স্থানীয় সরকারের সহায়তায়। সেই ভাবা সেই কাজ। পরের দিন সবাই মিলে চলে গেলেন নিজেদের তালন্দ ইউনিয়য়নে। চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করলেন তিনি সব শুনে খুশি হয়ে সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন।

এবার সংগঠনের সবাই মিলে আলোচনায় বসলেন কাজটি কিভাবে শুরু করা যায়। আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন বারসিক’র স্থানীয় প্রতিনিধি। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হলো ছোট ছোট অনেকগুলো সাইনবোর্ড তৈরি করা হবে যেখানে লেখা থাকবে ‘আমি গাছ, আমারও জীবন আছে। তোমার জীবন বাঁচাতেও আমার আবদান আছে। আমাকে পেরেকবিদ্ধ না করার জন্য অনুরোধ করছি।’ এরপর চেয়ারম্যানকে দিয়ে দেবীপুর বাজারের বট গাছে পেরেকবিদ্ধ বিজ্ঞাপন গুলোর পেরেক তুলে দিয়ে তা অন্যভাবে জি আই তার দিয়ে ঝুলিয়ে দিবেন। এরপর সচেতনতা মূলক সাইনবোর্ড একই ভাবে ঝুলিয়ে দিবেন।


এ বিষয়ে স্বপ্ন আশার আলো যুব সংগঠনের সভাপতি আলমগীর হোসেন (৩২) বলেন, ‘আমার চাই মানুষ সচেতন হয়ে গাছকে ভালোবাসুক, গাছ আমাদের অনেক উপকার করে। আমার নিরব প্রতিবাদের মাধ্যমে সকলে সচেতন করে যাব। আমাদের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।

দেবিপুর বাজার থেকে কার্যক্রমটি শুরু করে মোহর গ্রামের মোড়ে মোড়ে রাস্তার ধারে, যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় এমন স্থানের গাছগুলো থেকে পেরেক অবমুক্ত করে নিজেদের সচেতনতামূলক সাইনবোর্ডটি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। মোহর গ্রামে যখন এ কার্যক্রমটি চলছিলো তখন একজন ভ্যান চালক মোঃ আব্দুল জলিল (৪৬) বলেন, ‘হায়রে সামনে যেদিন আসছে (গমে কাল) তখন কাজ করে ছায়ার জন্য গাছ তলায় ছুটে যাব। আর সেই গাছেই কারা যে এত বড় বড় লোহা (পেরেক) মারে।’
কিছু মানুষ সব সময় প্যান প্রকৃতির সুরক্ষায় চিন্তা করেন। মোহর স্বপ্ন আশার আলো যুব সংগঠনের সদস্যদের এই কার্যক্রমটি তেমনই একটি উদাহরণ।

happy wheels 2

Comments