কেন্দুয়ায় বন্যার্ত মানুষের জন্য শুকনো খাদ্য সহায়তায় যুব সংগঠন
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
বিগত প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ও পাহাড়ি ঢলে কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের জলাবদ্ধ ও বন্যার্তদের মাঝে স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার শুকনা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। আশুজিয়া ইউনিয়নের হৃদয়ে কেন্দুয়া যুব সংগঠন এবং প্রকৃতি ও জীবন যুব সংগঠনের উদ্যোগে নিজস্ব অর্থায়নে ইউনিয়নের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গোপালপুর ও সরপাড়া গ্রামের এক হাজারটি পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়। বিতরণকৃত ত্রাণের মধ্যে ছিল মুড়ি, চানাচুর, পানি ও খাবার স্যালাইন।
বাংলাদেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ন্যায় নেত্রকোনা জেলার মদন, খালিয়াজুড়ি, মোহনগঞ্জ, আটপাড়া, কেন্দুয়া ও দূর্গাপুরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে রেকর্ড পরিমাণ ভাড়ি বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ী ঢল গারো পাহাড়ের পাহাড়ি নদী ও ছড়া দিয়ে গড়িয়ে পানিতে আমাদের রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, ঘরবাড়ি, অফিস আদালত, হাওর ও কৃষি তলিয়ে দিয়েছে। পাহাড়ি ঢলের সাথে যুক্ত হয়ে গত এক সপ্তাহ যাবৎ ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে জলাবদ্ধতায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এক নাগারে বৃষ্টির ফলে পানি ঘরবাড়িতে প্রবেশ করেছে। ঘরে জমিয়ে রাখা জ্বালানি পানিতে ভিজে ব্যবহার অনুপযোগি হওয়ায় খাবার তৈরি করেও খেতে পারছেন না দূর্গত এলাকার জনগোষ্ঠী। অনেকের খোরাকের চাল ও গোলার ধান পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে আবার দূরের বাজারে গিয়েও খাবার কিনতে পারছেন না। অন্যদিকে এ সুযোগে সুযোগ সন্ধ্যানী অসাদু ব্যবসায়ীরা শুকনা খাবার চিড়া ও মুড়ির দামও অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফলে বেশ কয়েকদিন যাবৎ এসব দূর্গত এলাকার অনেক পরিবার তাদের পরিজন নিয়ে অনাহারে ও অর্ধাহারে পানিতে ভাসমান অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা খালিয়াজুড়ি, মদন, মোহনগঞ্জ, দূর্গাপুর ও আটপড়া উপজেলার দূর্গতদের দিকে ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কাজে বেশি মনোযোগি হওয়ায় গণমাধ্যমের প্রচারণা না পাওয়া এলাকাগুলো বঞ্চিতই রয়ে গেছে। কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া, বলাইশিমুল ও মোজাফরপুর ইউনিয়নের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। সরেজমিনে এলাকা ঘুরে স্থানীয় দু’টি স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন (হৃদয়ে কেন্দুয়া এবং প্রকৃতিও জীবন যুব সংগঠন) আশুজিয়া ইউনিয়নের সবচেয়ে দূর্গত গ্রাম গোপালপুর ও সরপাড়া গ্রামের পানিবন্ধি জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
নিজেরা এলাকার বিত্তবান, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আশুজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দু’টি গ্রামের বাড়ি ও আশ্রয় কেন্দ্রের এক হাজার দূর্গত পরিবারের মধ্যে এককালীন খাদ্য সহায়তা প্রদান করে। সামান্য শুকনো খাদ্য সহায়তা পেয়ে উক্ত গ্রামের লোকেরা তাদের পরিবারের প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও শিশুদের মূখে সামান্য হলেও খাবার তুলে দিতে সক্ষম হয়েছে।
হৃদয়ে কেন্দুয়া যুব সংগঠন এবং প্রকৃতিও জীবন যুব সংগঠন প্রচার না পাওয়া এমন গ্রামের পানিবন্ধী দূর্গতদের খাদ্য সহায়তায় স্থানীয় সরকার, উপজেলা প্রশাসনসহ সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।