নারী ভ্যক্সিনেটর স্বপ্না রানী
সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল আলীম
বাংলাদেশের উপকুলবর্তী সর্ববৃহৎ উপজেলা শ্যামনগর উপজেলা, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দূর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছে এই উপকুলীয় উপজেলা। তেমনি দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য এ উপজেলার বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পেশায় নিজের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন। কেউ এলাকা ছেড়ে একটু কাজের সন্ধানে অন্য এলাকায়, কেউ কেউ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।
অসংখ্য পেশার মধ্যে নতুন পেশায় নিজের নাম লেখালেন উপজেলার মুন্সিগঞ্জের চুনকুড়ি গ্রামের স্বপ্না রানী। তিনিও কাজের জন্য বিভিন্ন সময় এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় পাড়ি জমান দীর্ঘ সময়ের জন্য। কখনো ৬ মাসের জন্য ইটের ভাটায়, কখনো সিজন চুক্তিতে মধুর খামারে শ্রমিক হিসেবে, কখনো সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া ধরতে। স্বপ্না রানীর শ্বশুরবাড়ি এসে খুঁজতে থাকে কোন ছোটখাটো কিছু একটা করে তার স্বামীর সাথে পরিবারে কিছু সহযোগিতা করতে পারে কিনা। কিন্তু সেখানেও ভবিষ্যতে কোন চাকরির সুযোগ মিলবে কিনা তার কোন আশা ছিলনা। একটি পুত্র সন্তান হওয়ায় সংসারের অনেক ব্যস্ত ও দায়িত্ব বেড়ে যায় তাঁর।
তিনি ২০২২ এর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন। তাঁর দায়িত্ব ও স্বচ্ছতা দেখে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে উক্ত দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয় তাঁকে। প্রকল্পের কার্যক্রম হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ২ জন করে প্রাণীসম্পদ ভ্যাক্সিনেটর তৈরির জন্য তালিকায় তিনি নিজ উদ্যোগে তাঁর নামটা লেখান। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের আয়োজনে হাতে কলমে প্রাণীদের ভ্যাক্সিন দেওয়া শেখানো হয় এবং ইউনিয়নভিত্তিক প্রাণীসম্পদ সহকারীদের সাথে বিভিন্ন স্থানে অনুশীলন করতে থাকে। তিনি ওই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে নানান বিষয় জানতে ও শিখতে পেরেছেন বলে তিনি জানান।
বর্তমানে তিনি ছাগল, ভেড়া, হাস, মুরগী, পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর ভ্যাক্সিন দিতে পারেন এবং নিজেই বিভিন্ন এলাকায় ভ্যাক্সিন ক্যাম্প করে থাকেন। সেখান থেকে তিনি উপজেলা থেকে ভ্যাক্সিন নিয়ে স্বল্পমুল্যে উক্ত সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিটা ক্যাম্পেইনে তিনি কিছু সন্মানী পান। এভাবে তিনি আয় করতে শুরু করেন এবং পরিবারে একটি নতুন আয় যুক্ত করতে সহায়তা করেন। তিনি দিন দিন একজন নারী ভ্যাক্সিনেটর হিসেবে ভালো পরিচিতি লাভ করছেন এবং সবাই তাঁকে চিনতে পারছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই পেশায় যুক্ত থাকবেন। নারী ভ্যাক্সিনেটর হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন। এ কাজ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের ছোটখাটো প্রয়োজন মেটাতে পারবেন।