কৃষিজমি সুরক্ষায় সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণের দাবি
সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
“আমরা দিনমজুরী কৃষক। একদিন যোন না দিলে আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। যোন মজুরী দেওয়ার সাথে প্রতিবছর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করি। আর এ ধান কোন বছর ভালো হয় আবার কোন বছর ভালো হয়না। ভালো না হওয়ার মূল কারণ হলো মিষ্টি পানি না থাকা। আমাদের এলাকায় চারিদিকে শুধু পানি আর পানি কিন্তু তা সেচযোগ্য এবং খাওয়ার কাজে ব্যবহার অনুপোযোগী। প্রতিবছরের ন্যায় এবছর ও আমি আমন মৌসুমে ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে ৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান করি। সেখানে ধান পেয়েছি মাত্র ৩০ মণ যেখানে পেতাম প্রায় ৪৫ মণের বেশি। শুধুমাত্র পানির জন্য এ সমস্যা। আমাদের কৃষকদের কৃষি জমি সুরক্ষায় আগে দরকার সুপেয় পানি নিশ্চিৎ করা। তাহলেই আমরা ১২ মাস ধানসহ নানান ফসল উৎপাদন করতে পারবো।”
উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের নকিপুর গ্রামের কৃষাণী জেসমিন বেগম। গতকাল বারসিক’র সহায়তায় ও হায়বাপুর সেবা কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে কৃষি জমি সুরক্ষায় ভূমিহীন, বর্গাচাষী, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের দাবি’ শীর্ষক সভায় তিনি কথাগুলো বলেন।
সভায় কাচড়াহাটি, নকিপুর, মাজাট, ইসমাইলপুর, হায়বাতপুর, দেবালয় গ্রামের ভূমিহীন, বর্গাচাষী, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক-কৃষাণী ও বারিসক কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জন অংশগ্রহণ করেন। সভায় অংশগ্রহণকারীদের নিকটে উপকূলীয় এলাকায় কি কি কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে বা কৃষি জমি মানসম্মত না থাকা এবং কৃষি জমি সুরক্ষায় কি কি করা যেতে পারে তা জানার চেষ্টা করা হয়।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘যতই দিন যাচ্ছে ততই যেমন কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। তেমনিভাবে কৃষিজমি অকৃষিখাতে চলে যাচ্ছে। কৃষিজমি কমে যাওয়াতে এলাকা থেকে প্রাণী সম্পদ, মাছ, ফলজসহ নানান উদ্ভিদবৈচিত্র্য কমতে শুরু করেছে।’ এ কৃষিজমি কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে তারা মনে করছে লবণাক্ততা, অবাধে কৃষিজমি নষ্ট, অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষ, মিষ্টি পানির আধার না থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অবৈধ স্থাপনা তৈরি, চিংড়ি ঘেরের প্রভাব বিস্তার, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ, চিংড়ি ঘেরের আউট ড্রেন না থাকা, খাসজমির সঠিক বন্দোবস্ত না হওয়া ইত্যাদি।
অংশগ্রহণকারীররা কৃষি জমি সুরক্ষার জন্য কিছু দাবি তুলে ধরেছেন তার মধ্যে রয়েছে: সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রাকৃতিক জলাশয়, খাল ও পুকুর খনন করা, খালে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ, লবণ পানি ও মিষ্টি পানির জন্য আলাদা যোন ঠিক করা, রাসায়নিক সার কম ব্যবহার, জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা, খাস জমি ভূমিহীনদের মাঝে সঠিকভাবে বণ্টন, খালগুলোতে গেট স্থাপন, চিংড়ি ঘেরের আউট ড্রেন তৈরি, স্বল্প সুদে কৃষককে গরু সহায়তা, এলাকা উপযোগী বীজ সহায়তা, আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ সহায়তা ইত্যাদি।