আসমা খাতুনের মুদি দোকান
সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার
মুদি দোকান করে আর্থিকভাবে লাভের মুখ দেখেছেন আসমা খাতুন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এবং পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে টিকে থাকার নিরন্তর প্রচেষ্টা আব্যাহত রেখেছেন উপকূলীয় এলাকার পেশাজীবী জনগোষ্ঠী। তেমনই এক আত্মপ্রত্যয়ী নারী আসমা খাতুন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চুনা গ্রামে পিতামাতার সংসারে বাস করেন আসমা বেগম।
১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় দাতিনখালী গ্রামে। সংসারে ২ মেয়ে ১ ছেলে। সন্তানের জন্মের পরপরই বিয়ের নয় বছর পর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। তিন সন্তানকে সাথে নিয়ে নিজের পিতার সংসারে চলে আসেন তিনি। পিতার অভাবী সংসারে এসে কোন রকমে দিন চলছিল তাদের।
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ্ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চুনা গ্রামে দোয়েল সিএসও দলে যুক্ত হন আসমা খাতুন। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক দলীয় আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পর বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তার পারিবারিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পণার পে্িরক্ষতে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসেবে দুটি ছাগল সহযোগিতা পান। একই সাথে পরিবেশ প্রকল্প থেকে তাকে একই সাথে একটি কদবেল ও সবেদার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ ও ৩টি মুরগী সহযোগিতা দেওয়া হয়। এরপর থেকে বারসিক’র নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার সম্পদকে ভালোভাবে দেখাশুনা ও লালন পালন করতে পারেন। পরবর্তিতে তার নতুন একটি ব্যবসার চিন্তা মাথায় আসেন। নিজেদের ঘরের অন্যপাশে একটি মুদি দোকান করার পরিকল্পনা নেন। সেই লক্ষ্যে তিনি তিনি একটি ছাগল বিক্রি করে দেন।
প্রাথমিকভাবে ছাগল বিক্রির ৬ হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ বাজার থেকে মুদি মালামাল কিনে মুদি দোকান শুরু করেন। স্থানীয় এলাকার মানুষেরা এখান থেকে প্রতিদিন মুদি মালামাল ক্রয় করার সুবাদে তার বিক্রয় বাড়তে থাকে। এখন প্রতিদিন তার ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। সপ্তাহ শেষে বিক্রির টাকা একত্রিত করে আবারো বিনিয়োগ করেন। এভাবেই চলমান মুদি ব্যবসার মাধ্যমে তার পারিবারিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রসঙ্গে আসমা খাতুন বলেন, “আমার মুদি দোকানে যেভাবে বেচা কেনা বেড়ে গেছে তাতে বেশ ভালোই আয় হচ্ছে। আমি এই ব্যবসাটাকে আরো বড় করার চিন্তা করেছি। এজন্য দিনকে দিন দোকানের পুজি বাড়াচ্ছি।’
আসমা খাতুন নিজের পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় মুদি দোকানের ব্যবসাটাকে আরো বড় করার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে চলেছেন। নিজের সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পণা, সাহস ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আসমা খাতুন যেভাবে এগিয়ে চলেছেন তার মাধ্যমে পারিবারিক উন্নয়নের পাশপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটবে।