ছাগল পালনে সফল পূর্ণিমা রানী
সাতক্ষীরা থেকে মহিরঞ্জন মন্ডল
সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামে একটি অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারে দিনাতিপাত করেন পূর্ণিমা রানী (৩৪)। এক ছেলে, এক মেয়ে ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে অভাবের সংসারে দিন কাটে পূর্ণিমা রানীর। তিনি বাড়ির গৃহস্থালির কাজ ছাড়া তেমন কোনো কাজ করতে পারে না। নদীতে মাছ ধরে কোন রকমে সংসার চালায় তিনি। মেয়ে পড়ালেখা করে দশম শ্রেণীতে এবং ছেলে অষ্টম শ্রেণীতে। ফলে এমনিতেই অভাবের সংসার তার উপর ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচসহ এতোগুলো মানুষের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। বসতভিটায় জায়গার পরিমাণ কম থাকায় এবং স্বামর্থ্য না থাকায় নিজেদের বসবাস করার ঘরটাও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কয়েকবার ভেঙে গেছে। ঘরের চালের টিন উড়ে চলে গেছে। দুর্যোগ কেটে গেলে আবার কোন রকমে ঘরটা মেরামত করে নতুন করে আশার স্বপ্ন বুনে সংসার করে পূর্নিমা রানীর পরিবার।
এরকম পরিস্থিতিতে পূর্ণিমা রানী ও তার পরিবার যখন পুরোপুরি দিশেহারা ঠিক তখনই বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের বকুল দলের সদস্য হিসাবে যুক্ত হন তিনি। তিনি প্রতিসপ্তাহে দলীয় আলোচনায় হাজির হন এবং একটা পর্যায়ে জলবায়ু সহনশীল কৃষিচর্চা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদের লালন পালন, পরিচর্যা ও বসতভিটায় যে সামান্য জায়গা রয়েছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে সবজি চাষ করতে হয় সে বিষয়ে জানতে পারেন। পূর্ণিমা রানী তার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে আয়বর্ধনমূলক কাজ হিসাবে ছাগল পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং নেটজ্ বাংলাদেশের সহায়তায় বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা মূল্যের ৩টি ছাগল নেন এবং বাকি দেড় হাজার টাকার হাঁস মুরগী নেন। ছাগলগুলো তিনি তার নিজের সন্তানের মত যতœ করে লালন পালন করেন। সাপ্তাহিকদলীয় আলোচনায় এসে তিনি জানতে পারেন যে নিয়মমত ভ্যাকসিন দিলে ও কৃমির ঔষধ খাওয়ালে ছাগল অনেক ভালো থাকে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক কমে যায়। ফলে তিনি বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের প্যারাভেট কর্মী সোনিয়া আক্তারের নিকট থেকে ভ্যাকসিন দিয়ে নেন তার ছাগল গুলোকে।
বর্তমানে সঠিক পরিচর্যার ফলে তার ৩টি ছাগল থেকে টি বাচ্চা দিয়েছে এবং মোট ছাগলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০টি। পূর্র্ণিমা রানী এখন নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন যে, ১০টি ছাগল থেকে ৫টি বিক্রি করে তার বসবাসের ঘরটি নতুন করে মেরামত করবেন এবং ছেলেমেয়েকে ভালো শিক্ষকের নিকট প্রাইভেট পড়াবেন যাতে করে তার সন্তান লেখাপড়া শিখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যাতে তারা ভালো চাকরি করে তার সংসারের অভাব অনটন দূর করতে পারে। পাশাপাশি মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে । ছাগল পালনে জীবন জীবন-জীবিকা বদলানোর স্বপ্ন দেখছেন পূর্নিমা রানী। তিনি এখন অনেক খুশি।