দু’জনে মিলে আয় করলে সংসারের সঞ্চয় বাড়ে
মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে রিনা আক্তার
শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর প্রায় দেশেই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে পুরুষকেই তুলে ধরা হয়। কিন্তু বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও পরিবারের উপার্জনক্ষম হয়ে উঠেছেন। এমনই এক নারী যমুনা সিদ্ধা যিনি তাঁর পরিবারের ব্যয়সাশ্রয়ী কাজের পাশাপাশি উপার্জনমূলক কাজে ভূমিকা রাখছেন ।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার পৌরসভাধীন আঙ্গারিয়া গ্রামের গৃহবধুু যমুনা সিদ্ধা (৪৩), স্বামী সুনীল সিদ্ধা (৪৮) পেশায় ট্রাক চালক, বড় মেয়ে ঝিলিক সিদ্ধা (২০) বিবাহিত ,মেজো মেয়ে রাত্রী সিদ্ধা (১৬) এস.এস.সি পরীক্ষার্থী, ছোট ছেলে রাম সিদ্ধা (১২) সে সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে, স্বামী ও তিন সন্তান নিয়েই তার পরিবার ।
যমুনার পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি তার স্বামী। তিনি ভাড়ায় চালিত একটি ট্রাক চালান, বর্ডার থেকে গরু আনা-নেয়ার কাজ করেন। কিন্তু প্রতিদিন তার গাড়িতে ভাড়া হয় না, মাসে দু-একবার কাজের সুযোগ হয়। এই টাকা দিয়ে তার পরিবারের চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব। তার উপরে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগানো তো আরও বেশি কষ্টসাধ্য। তাই টাকার অভাবে বড় মেয়েকে লেখাপড়া করাতে না পেরে অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ে দেয়ার সময় তাদের অনেক ধার-দেনার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবারের সবাই একজনের আয়ের উপর নির্ভর করে থাকে। তাদের নিজস্ব কোন চাষের জমি না থাকায় সবকিছুর জন্য বাজারের উপর নির্ভর করতে হয়। একদিকে পরিবারিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে অন্যদিকে ধার-পরিশোধ তার উপরে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, সবকিছু মিলে জীবন যেন বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছে।
চারিদিকে এমন হাহাকার দেখে যমুনা প্রায় দিশেহারা হয়ে যায়। তিনি দেখেন অর্থের অভাবে তার সন্তানদের লেখাপড়া থেমে যাচ্ছে তখন কোন কূলকিনারা না দেখে কিছু আয় করার কথা ভাবেন যাতে তিনি পরিবারের কিছটা হাল ধরতে পারবেন। তিনি দেখেন পারিবারিক কাজের পাশাপাশি অনেকেই আয়মূলক কাজ করছেন। তার আশেপাশের অনেক নারীই কাগজ ও আঠা দিয়ে বাঁজির খোল বানাচ্ছেন। এক মণ খোল বানাতে পারলে ১২শ’ টাকা পাওয়া যায় । তখন তিনি বাঁজির খোল বানানোর আগ্রহ প্রকাশ করলে বারসিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আঙ্গারিয়া নারী উন্নয়ন সমিতির সভাপতির মাধ্যমে সেই ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেন এবং সে কাজটি করার সুযোগ পায় এবং তার কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়।
সেখান থেকে বাঁজির খোলের প্রয়োজনী উপকরণ কাগজ ও আঠা তৈরিতে সহায়তা করা হয়। পুরাতন খাতার কাগজ ও সেইসাথে গরম পানি, আটা ও তঁতে দিয়ে কাগজ জড়ানোর আঠা তৈরি করে নিতে হয়। প্রথমে কাগজ ছোট ছোট টুকরো করে কেটে তারপর সেগুলো কাঠির মাধ্যমে গোল করে আঠা দিয়ে জুড়িয়ে দেয়া হয়। রোদে শুকানোর পর সেগুলো খোলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় । তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন প্রায় এক হাজার এর মতো খোল তৈরি করতে পারি। আর এই কাজে আমার স্বামীসহ পরিবারের অন্যরা সহায়তা করে থাকে।’
যমুনা সিদ্ধা বলেন, ‘‘স্বামীর একার আয় যেখানে সংসার চালানোই কষ্টকর সেখানে কিছ সঞ্চয় করা তো বিলাসিতা। পরিবারের কাজের পাশাপাশি আমি এই কাজটি করি। যাতে করে আমার সংসারের কাজের কোন ব্যাঘাত না ঘটে। তিনি আরো বলেন, ‘আমি যে টাকা আয় করছি এই টাকা আমি আমার পরিবারের ও সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগানোর পাশাপাশি কিছু জমাতেও পারছি। এতে করে আমার সাংসারিক খরচ যেমন একদিকে লাঘব হচ্ছে অন্যদিকে কিছু সঞ্চয়ও করতে পারছি।’ তিনি বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী যদি একসাথে আয় করতে পারে তবে সংসারের আয়ও বাড়বে, সেই সাথে সঞ্চয়ও বাড়বে’।’