হারিয়ে যাওয়া জোয়ান ফিরে এসেছে
সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর প্লাবণ সমতল ভূমি হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে মাঠে-ঘাটে প্রাকৃতিকভাবেই বর্ষার পানি প্রবাহিত হয়ে পলি পড়ে। পলিমাটিতে কৃষকগণ আবাদ করেন খেসারি, মাসকলই, মুসুর ডাল, ধনিয়া, রাঁধুনী, মিষ্টিসজ, কালোজিরা, মেথি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, হলুদ, তিশি, তিল, গুজিতিল, জৈন, গম, পাইরা, শরিষা, শাক সবজি, পাট ও ধান প্রভৃতি। কৃষকরা এসব ফসলের বীজ রেখে অনাদিকাল থেকে নিজেরা চাষাবাদ করে আসছেন। বারসিক উদ্যোগী কৃষকদের সহযোগিতায় চাষবাদ থেকে হারিয়ে যাওয়া ফসল গুজিতিল, জোয়ান (মসলা) সংগ্রহ করে চাষ ও সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া যে সকল ফসল মাঠে খুবই কম চাষ হচ্ছে যেমন তিশি, তিল, কাউন সেগুলোর বীজ কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণে সহায়তা করে সংগঠনটি।
হরিরামপুর বাহিরচরের কৃষক গবেষক শহিদ বিশ^াস বলেন, ‘মানুষ প্রকৃতির সকল উপাদানসহ প্রাণ প্রকৃতি ও সংগৃহীত খাদ্যের উপর নির্ভরশীল। অন্যান্য প্রাণিরা প্রকৃতির গাছপালা, উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতির সকল প্রাণির সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে সকল ধরনের খাদ্যের প্রয়োজন। তেমনিভাবে মাটি ও পরিবেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বৈচিত্র্যময় ফসল ফলাতে কৃষিবীজ সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকা থেকে কৃষক গুজিতিল ও জৈন (মসলা) চাষ না করায় এই বীজগুলো হারিয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজার পর বারসিক সহযোগিতায় গত বছর গুজিতিল সংগ্রহ করে চাষ করছি। এ বছর জোয়ান (মসলা) সংগ্রহ বীজ সংগ্রহ করে ৫ শতাংশ জমিতে চাষ করছি। জৈন মসলা হিসাবে খাবারে ও পানের সাথে ব্যবহার করা হয়। ৩০ শতাংশ জমিতে ৪ মণ জৈন হয়।’
হরিরামপুর বাহিরচরের কৃষক পিপাসা মনিদাস বলেন, ‘হরিরামপুর পদ্মা নদীর নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় বর্ষা বা বন্যার পানিতে চকের মাটি পরিবর্তন হয়। চকের মাটি চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ফসলের দরকার হয়। এজন্য মাঠ থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া গুজিতিল, জোয়ান (মসলা) বীজ সংগ্রহ করে আমরা চাষ করছি। মাঠ থেকে হারিয়ে যাওয়া কুসুম ফুল (তেল হয়) বীজ এখনো সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। তবে মাঠে একেবারেই চাষ কমে যাচ্ছে তা হলো তিল, তিশি, কাউন ও দিঘা, মুল্লা দিঘা, হিজল দিঘা ধান। এসকল ফসল চাষ বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে বারসিক বীজ দিয়ে ও তথ্য আদান প্রদান করে সহযোগিতা করছে।’
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর নদীর তীরবর্তী এলাকা হওয়ায় বর্ষার সময় মাঠে ঘাটে পলি পড়ে। প্রতিবছর মাঠে পলি পড়ায়, মাটির ধরন পরিবর্তন হয়। এ অবস্থায় কৃষকগণ মাটির ধরন অনুযায়ী চাষাবাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফসল বীজ প্রয়োজন হয়। কৃষক পর্যায়ে বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদে তথ্য আদান প্রদান ও হারিয়ে যাওয়া বীজ সংগ্রহে উদ্যোগ গ্রহণে বারসিক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সকল প্রাণির খাদ্য সুরক্ষায় বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ একান্ত প্রয়োজন। প্রায় হারিয়ে যাওয়া ফসল চাষাবাদে এনে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কৃষকের পছন্দ অনুযায়ী চাষের মাধ্যমে খাদ্য সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহায়ক হবে।