দেশি জাতের বীজ বিনিময় ও বীজ সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার শপথ নিলেন শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী মো. শহিদুল ইসলাম
এই স্কুলটিতে বাংলাদেশর প্রথম বীজ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত দেশি বীজ ও পরিবেশ শিক্ষা নিয়ে বক্তৃতামালা,রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। কখনও কখনও বীজ লাইব্রেরি কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে আশেপাশের অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হন।
বলা হচ্ছে, রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা। গতকাল (১২ জুন ২০২৪, বুধবার) বীজ লাইব্রেরি ও বাংলাদেশ রির্সোস সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) যৌথ আয়োজনে বীজে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থীদের বীজ বিনিময় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সাথে একশত ত্রিশজন শিক্ষার্থী সামনে বীজ বিছিয়ে রেখে নিজেদের বীজ রক্ষার জন্য শপথ করেন।
দেশি বীজ সুরক্ষা করতে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করতে দেশি বীজের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক ও স্ব-শিক্ষিত কৃষি বিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, “ আমরা সবাই বীজ সম্পর্কে জানি। বীজ হচ্ছে কৃষির মূল চালিকা শক্তি। ভালো বীজ না হলে ভালো ফসল আশা করা যায় না। বীজ অনেক প্রকার হয় দেশি, উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রীড। এর মধ্য হাইব্রীড বীজ একবার চাষ করলে পরের বছর আর ওখান থেকে বীজ রাখা যায় না। কৃষককে বারবার বীজ কিনতে হয়। এতে করে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পরে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেখা যায় এক মণ ফসল বিক্রয় করেও এক কেজি হাইব্রডি বীজ পাওয়া যায় না। কৃষকরা হারিয়ে ফেলে বীজের স্বাধীনতা। আমরা দেখেছি অতীতে সব ফসলের বীজ কৃষকের বাড়ীতে থাকত। এখন আর এটা দেখা যায় না। দেশী বীজ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখান থেকে প্রতিবারই বীজ রাখা যায়। এই ফসলের স্বাদ ও গুণ অনেক ভালো হয়। দেশি বীজ সম্পর্কে তোমাদের জানতে হবে। এই বীজ রক্ষায় তোমাদের সচেতন হতে হবে। দেশি বীজ তোমাদের চিনতে হবে। তোমরাই পারবে আগামীতে দেশি বীজ রক্ষা করতে।’
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বড় বড় কোম্পানী গুলো আমাদের দেশি বীজ নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে সংকরায়ণ করেই হাইব্রডি বীজ তৈরি করে আমাদের কাছেই উঁচ্চ দামে বিক্রয় করে যা কৃষক পরিবারের জন্য অনেক বড় সমস্যা। দিন দিন এ অবস্থা আরো প্রকট হচ্ছে। এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আর সেক্ষেত্রে তোমরাই পার সব থেকে বড় ভ’মিকা রাখতে। তোমরা আগামীতে বড় বড় কর্মকর্তা হবে। তখন যদি দেশি বীজ সুরক্ষায় তোমরা ভূমিকা রাখতে পার তাহলেই আমাদের এ ধরনের আয়োজন সফলতা পাবে।
বারসিক’র গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম বলেন, একসময় আমদের এলাকা উপযোগী হাজারো ধরনের শস্য ফসলের জাত ছিলো, প্রতিটি জাতেরই আলাদা আরাদা বৈশিষ্্যৈ এবং স্বাদ ছিলো। এক ধানেরই চিলো হাজার হাজার জাত। কোনটি মুড়ি, খই, আবার কোনটির পায়েস খির, পোলাও, ভাতসহ নানা ধরনের আলাদা বৈশিষ্ট্যের ছিলো। তেমনি দেশি সবজির স্বাদ এবং গুণ এখনো অনন্য। দিনে দিনে এলাকা উপযোগী দেশী জাতের বীজগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় দেশের এই বহুবৈচিত্র্যের বীজগুলো হারিয়ে গেলে আমাদের নিজস্ব সম্পদই হারিয়ে যাবে। আমরা পরনির্ভরশীল হয়ে যাবো। তাই নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই জাতগুলো বিষয়ে সচেনতা জরুরী। এবং একই সাথে এই জাতগুলো সুরক্ষার উদ্যোগ সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে।’
স্কুলের সভাপতি মোঃ জবির মন্ডল বলেন, “বারসিক থেকে আমাদের স্কুলে বীজ লাইব্রেরী স্থাপন করেছে এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের দেশী বীজ সম্পর্কে জানা ও বোঝা সমৃদ্ধ করছে। বীজ নিয়ে এধরনের আয়োজন নতুন প্রজন্মকে কৃষিতে সফলতা অর্জনে সহায়তা করবে।’ সহকারী শিক্ষক শ্রী দেবব্রত চ্যাটার্জি বলেন, “আমরা কৃষি বিজ্ঞা পড়ানোর সময় সকল শিক্ষার্থীদের বীজ লাইব্রেরীতে নিয়ে যাই ,এতে করে শিক্ষার্থীরা বীজ সম্পর্কে, মৌসুম সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারণা লাভ করে। এরপর শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিয়ে আসা দেশী সবজী বীজ নিজেদের মধ্য বিনিময় করেন এবং মাটিতে বীজ ছড়িয়ে দেশী বীজ সুরক্ষায় শপথ গ্রহণ করেন। শেষে অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীদের একটি করে নিম,চালতা,জলপাই,পেয়ারা,জাম গাছ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারসিক’র প্রোগ্রাম অফিসার অমৃত কুমার সরকার।