বালুজমিতে পরীক্ষামূলক বাদাম চাষে সফল

কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের চন্দ্রডিঙ্গা একটি পাহাড় পাদদেশীয় গ্রাম। পাহাড় পাদদেশীয় হওয়ায় অনেক দর্শনার্থীর যাতায়াতও এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। চন্দ্রডিঙ্গার ডিঙ্গা, ছড়া, পাহাড়, ঝর্ণা, বটগাছ, পাহাড়ি পরিবেশ সবই এখন অনেকের কাছে পরিচিত। সীমান্ত রাস্তার উন্নয়নের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা সহজ হয়েছে। সীমন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়েও এখন চন্দ্রডিঙ্গার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। যদিওবা পাহাড়গুলো সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের। দলে দলে ঝাকে ঝাকে অনেক পর্যটক আসে গ্রামটিকে দেখার জন্য। অথচ প্রতিবছর কতইনা যুদ্ধ করতে হয় এখানকার মানুষদের কখনো পাহাড়ি ঢলের সাথে কখনোবা বন্য হাতি সাথে, কখনো বালি-পাথরের সাথে কখনো বা সুপেয় পানি জন্য কখনো বা বেকারত্বের সাথে।


চন্দ্রডিঙ্গা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ গ্রাম। কারণ বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে ভাসিয়ে দেয় বসতভিটা, ফসল, গবাদিপশু কখনো বা বালিতে ভরাট করে দেয় ঘরবাড়ি, পুকুর, ফসল ও ফসলী জমি। ২০২২ সালে কালের স্মরণীয় একটি পাহাড়ি ঢল সব কিছু ভাসিয়ে, ভরাট করে, নিঃস্ব করে দেয় অনেককেই। ফসল, ফসলী জমি, পুকুর এক রাতের মধ্যে বালিতে ঢাকা পড়ে মরুভূমিতে পরিণত হয় এ চন্দ্রডিঙ্গা গ্রাম।


গ্রামের অধিকাংশ ফসলী জমি ভরাট হয়ে গিয়েছিল সে পাহাড়ি ঢলে। সাবিনা রেমার ৪০ শতক পুকুর সে পাহাড়ি ঢলে বালিতে ভরাট হয়ে একটা মাঝে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ফলে কোন ফসল চাষ করা সম্ভব হচ্ছিল না। বালিময় এমন স্থানের পরীক্ষামূলক বাদাম চাষ করার জন্য পরার্মশ ও বাদাম বীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হয় বারসিক’র পক্ষ থেকে। পরিমল রেমা ও সাবিনা রেমা দুইজনের যৌথভাবে ৪০ শতক জমি পরীক্ষামূলকভাবে বালুময় স্থানে বাদাম চাষ করেন ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে। ঝুড়ঝুড়ে বালি থাকার কারণে তেমন চাষও করতে হয়নি। এক পর্যায়ে অতি খরার কারণে বাদাম গাছ ঝরে যাওয়ার উপক্রম হয়, যা দেখে তারা হতাশ হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টি হওয়ার পর গাছের রূপ পরিবর্তন হয়ে যায়। বাদাম তোলার সময় দেখা গেছে ৪০ শতক জমিতে ২২৫ কেজি ফলন পাওয়া যায়। নিজের খাওয়া, প্রতিবেশীকে দেওয়ার পর পরিমল রেমা ও সাবিনা রেমা দুইজনে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে ১৭৪ কেজি বাদাম বিক্রি করে ১৭ হাজার বেশি টাকা আয় করেন।


ভরাট হয়ে যাওয়ার পর বালিময় জমিটি একবছর অনাবাদি অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। কোন ফসল চাষ করা হয়নি। এ বছর পরীক্ষামূলক বাদাম চাষ করে মোটামুটি লাভবান হয়েছেন তারা। এ প্রসঙ্গে পরিমল রেমা বলেন, ‘আমরা এবারই প্রথম পরীক্ষামূলক বালু জমিতে বাদাম রোপণ করি, বাদাম গাছ অনেক ভালো হয়েছিল কিন্তু সমস্যা হলো অনেক বাদামের বীজ পুষ্ট হয়নি বা বাদাম দেখতে সুন্দর হয়েছে কিন্তু ভিতরে বীজ ছিল না। জানি না কি কারণে এমন হয়েছে, সমান তালে বাদাম হলে আরো অনেক টাকার বাদাম বিক্রি করতে পারতাম।’ সাবিনা রেমা বলেন, ‘এই জায়গায় আমার পুকুর ছিল। পাহাড়ি ঢলে পুকুর ভরাট হয়ে যায়। ফলে আমি মাছ বা ফসল কোনটাই চাষ করতে পারছিলাম না। বারসিক কর্মীরা আমাকে এখানে বাদাম চাষ করার জন্য সহযোগিতা করেন, যার কারণে আমি পরীক্ষামূলক জীবনে এই প্রথমবার বাদাম চাষ করি। ফলন ভালোই হয়েছে তবে কিছু চিতা হয়েছিল। যার কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে আগামী বছর আরো বেশি করে বাদাম চাষ করার পরিকল্পনা আছে।’

happy wheels 2

Comments