রহিমের মজার পাঠশালায়
আসাদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা থেকে:
কেউ হোটেলে কাজ করে, কেউ মুদি দোকানে, আবার কেউ বাবা-মায়ের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে স্কুলে যেতে পারে না। এদের কারো কারো বয়স ১০/১১ বছর, আবার কারো বয়স ৫/৭ বছর। বিবেকের তাড়নায় সমাজের এই সব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে এগিয়ে এসেছে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা শেষ বর্ষের ছাত্র আব্দুর রহিম। বন্ধুদের সহযোগিতায় নিজের বাড়িতেই রহিম গড়ে তুলেছে মজার পাঠশালা।
প্রাথমিকভাবে এই পাঠশালায় সপ্তাহে একদিন ‘শুক্রবার’ শিশুদের দেওয়া হচ্ছে মজার মজার পাঠ। রহিমের আহবানে সেখানে একেক সপ্তাহে ক্লাস নেন তার একেক বন্ধু। মজার পাঠশালায় আনন্দের সাথে শিশুরা শিখছে ছবি আঁকা থেকে শুরু করে জীবনে প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা। শিখছে আদব-কায়দা। সৃষ্টি হচ্ছে দেশের প্রতি মমত্ববোধ। মজার পাঠশালার শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য খাতা, কলম, বই, পেনসিলসহ সব ধরনের উপকরণও দিয়েছে রহিম ও তার বন্ধুরা।
আব্দুর রহিম জানান, এখানে জাতীয় সংগীত ও শপথ পাঠ করিয়ে কøাস শুরু হয়। তিনি বলেন, “অন্তত জাতীয় সংগীতটুকু যে তারা শিখতে পারছে, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের।” রহিম জানান, তার বন্ধু শাহরিয়ার সোহাগ, নাঈম, মাইয়শা, মৌসুমি, মৌ, মনিরুল, আলমগীর, মুন্নী, সুব্রত, মোস্তাকসহ অনেকেই ক্লাস নেন এখানে। শুধু তাই নয়, এখানে ক্লাস নিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মোবারক আলী, সহকারী শিক্ষক আলাউদ্দিনসহ অনেকেই।
মজার পাঠশালায় এসে অনেকেই দেখতে শুরু করেছে স্বপ্ন। সামিয়া, সিনথিয়া, নাঈম, সোহান, আমানউল্লাহ, জব্বারসহ অনেকেই এখন স্বপ্ন দেখছে ডাক্তার, পাইলট হওয়ার। একটা ব্যতিক্রমী বিষয়ও আছে সেখানে। সেখানকার মজার পরিবেশ দেখে রহিমের প্রতিবেশী ধনীরাও ছেলে-মেয়েদের পাঠাচ্ছেন মজার পাঠশালায়। সব মিলিয়ে এখানকার শিক্ষার্থী সংখ্যা এখন ২০ পেরিয়েছে।
শিশু শিক্ষার্থী আমানউল্লাহ (৮) জানায়, সে একটি মুদি দোকানে কাজ করে। বাবা তাদের দেখে না। মা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে। তার ভাই জব্বারও কাজ করে একটি হোটেলে। অল্প কিছুদিন স্কুলে গিয়ে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। তাই সপ্তাহে ছুটির দিনে মজার পাঠশালায় আসে সে। সে বলে, “এখানে এসে অনেক কিছু শিখছি। শুধু শেখার জন্য নয়, সবার সাথে থাকতে আমার অনেক ভালো লাগে।”
মজার পাঠশালার কারিগর আব্দুর রহিম বলেন, “আমাদের চারপাশে অসংখ্য শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। রহিমের বন্ধু শাহরিয়ার সোহাগ জানায়, রহিমের মজার পাঠশালা আমারও খুব ভাল লেগেছে। তাই ক্লাস নিতে আসি। শিশুদের সাথে সময় কাটাতে ভাল লাগে।