সজনে পুষ্টির আধার

হরিরামপুর থেকে সত্যরঞ্জন সাহা ও মুকতার হোসেন:

“কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাটায় ভরে গেছে গাছটা…”

কবির কবিতায় প্রাণ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য্য আমাদের চোখে ধরা দেয়। সজনে ডাটা, ফুল নিয়ে আমাদের কাব্য ও সাহিত্যে অনেক কথায় লেখা হয়েছে। আমাদের গ্রাম বাংলার সর্বত্র সজনে, সজনের পাতা ও ফুল নিঃসন্দেহে একটি পুষ্টিকর নিরাপদ খাবার। সজনে গাছের ছাল ও পাতা ঔষধি হিসেবে ব্যবহারও বহুল পরিচিত। বিনা পরিশ্রমে শুধু একটি ডাল সংগ্রহ বাড়ির আনাচে কানাচে, রাস্তার পাশে লাগিয়ে রাখলেই কিছু দিনের মধ্যেই গাছ বড় হয়ে যায়। দেখতেও সজনে গাছ খুবই দৃষ্টিনন্দন।

Sajna

সজনে গাছের অতুলনীয় গুণ বিষয়টি বিবেচনা করে হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে হরিহরদিয়া গ্রামে ৪০ জন কৃষক ১০০টি সজনে ডাল রোপণ করে নিজ বসতবাড়িতে। হরিহরদিয়া গ্রামের প্রায় ৬০% বাড়িতে সজনে গাছ রয়েছে। বাকী যে পরিবারগুলোতে সজনে গাছ  নেই, সে পরিবারগুলো ১০০% সজনে গাছ লাগানোর জন্য এলাকার কৃষক, যুবক ও শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে গ্রামের মানুষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে প্রত্যেককে নিজেদের বাড়িতে সজনে গাছ আছে তার বাড়ি ২টি ডাল সংগ্রহ করে যাদের বাড়িতে নেই সেখানে রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বারসিক হরিরামপুর রিসোর্স সেন্টারের কর্মকর্তা মুকতার হোসেন ও সত্যরঞ্জন সাহা এই কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করতে এলাকার তরুণ, যুবক ও কৃষকদের সাথে সজনে গাছ এর গুণাগুণ ও সজনে খাওয়ার গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন। এভাবে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের নটাখোলা, পাটগ্রামচর, হরিহরদিয়া ও সেলিম পুর গ্রামের কয়েকজন যুবক ছাত্র ফয়সাল, রাসেল, শহিদুল, কায়েস, কালাম উক্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সার্বিক সহায়তা করেন।

হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস তথ্য অনুযায়ী, উক্ত গ্রামকে সজনে গ্রাম হিসেবে ঘোষণ করা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বারসিক লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে ২০১৫ সাল থেকে পাটগ্রামচর, খড়িয়া, হালুয়াঘাটা, নটাখোলা, বালিয়াচর, গঙ্গাদরদী গ্রামে কৃষকদের সাজনা গাছ রোপনে উদ্বুদ্ধকরণে সহায়তা প্রদান করছে আসছে। এ ছাড়াও বয়রা ইউনিয়নে আন্ধারমানিক, দড়িকান্দি, কর্মকারকান্দি, খালপাড় বয়রা সাজনা গাছ রোপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ইতিমধ্যে হরিরামপুর উপজেলায় কৃষক-কৃষাণী, সেচ্ছা-সেবক লেছড়াগঞ্জ ও বয়রা ইউয়িনে ১২০০ সজনে গাছ রয়েছে । বাড়ি বাড়ি সজনে গাছ রোপণ করতে গিয়ে কৃষকদের সাথে তৈরি হয়েছে গভীর সম্পর্ক, একে অপরের সাথে কৃষি বিষয়ে তথ্য আদান প্রদান বীজ সংরক্ষণ, জৈবসার তৈরি ও ব্যবহার বিষয়ে জানাজানি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে হরিহরদিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম (৪০) তিনি বলেন, “আমার বাড়িতে সজনে গাছ ছিলো না, আমার পাশের পাড়া থেকে একটা সজনে ডাল চাইলে তারা আমাকে ৩টা ডাল দিয়ে সহযোগিতা করেন। ”

সজনে সম্পর্কে একটা প্রবাদ আছে, “সজনে বা সাজিনা পাতা ৩০০ রকম রোগ প্রতিরোধ করে”। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, এই ছোট্ট পাতা অবিশ্বাস্য মাত্রায় পুষ্টিকর, যা আমাদের শরীরকে মজবুত করতে পারে এবং নানাবিধ রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
যে কোন খাবারের সাথে বা তরকারীর সাথে তাজা বা শুকনা সজনে পাতা মিশিয়ে খাওয়া যায় । পাতা শুকিয়ে রাখা যায়। প্রতিদিন ৮-১০টি পাতা খেলে স্বাস্থ্যর উন্নতি হয় । সজনে ছাল, পাতা, ডাটা ফুল ও বীজ পুষ্টি ও ঔষুধি হিসেবে কাজ করে। তাই এক কথায় বলায় যায়, সজনে হলো পুষ্টি আধার।

happy wheels 2

Comments