উল্যা ঘাস: পান চাষের অন্যতম উপকারী উপকরণ

রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী

সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিতে প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্য। আমরা চোখ খুলে যা দেখি আর খালি চোখের যা দেখতে পাই না তার সবকিছু সৃষ্টিতে তার মহিমা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য এবং জগতের অন্যান্য সকল সৃষ্টি মানুষের কল্যাণের জন্য। আবার সৃষ্টিকর্তার সকল সৃষ্টির মধ্যে রেখেছেন আন্তঃনির্ভরশীলতা। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের সাথে রয়েছে পারস্পারিক নির্ভরশীলতার অপূর্ব সম্পর্ক। মাটির নিচের অনুজীব থেকে শুরু করে জলজ প্রাণী তিমি ও স্থলজ প্রাণী হাতিকেও অন্যের উপর নির্ভর করে বাঁচতে হয়। প্রকৃতির সেই রকমই একটি ক্ষৃদ্রতম উপাদান ঘাস। এই ঘাস তিনি সৃষ্টি করেন তার প্রাণীকুলের খাদ্যের যোগান দেওয়ার জন্য। আবার একটি বিশিষ্ট ধরনের ঘাসের উপর নির্ভরশীল বরেন্দ্র এলাকার পান চাষ। পানের বরজে পান গাছকে বাঁশের কাঠির সাথে বাঁধার জন্য অন্যতম উপকরণ একজাতীয় ঘাস যাকে স্থানীয় ভাষায় উল্যা, উলু ঘাস বলা হয়। অনেক স্থানে এই ঘাসটি চিরু নামেও পরিচিত। এই ঘাসটি শক্ত ও লম্বায় ৩ থেকে ৪ পর্যন্ত লম্বা হয়।

IMG_20160802_161339
আমাদের দেশে পান চষের জন্য উপযুক্ত দুটি জেলা রাজশাহী ও কৃষ্টিয়া। রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলা ও পাশ্ববতী পবা, বাগমারা থানার অন্তর্গত এলকায় পান চাষ ভালো হয়। পানচাষে বরজে’র বেড়া তৈরি ও পান গাছ বাধতে একমাত্র উপাদান উলা ঘাস পাওয়া যায় খৈড়ার ধার ঘেষে, বিলে ধারে গ্রামে ভিতর রাস্তার পাশে,পতিত জমিতে ও বিমানবন্দর এলাকায়। রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার সইপাড়া গ্রামে, রাজশাহী ও নওগা মহাসড়কের পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে উলা ঘাস প্রক্রিয়াজাত কাজ করা হয়। উলা ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, তাদের এইখানে মোহন উপজেলা ছাড়াও পাশ্ববতী জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জের নাচোল, ভোলাহাট নওগা জেলার নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর থানা থেকে উলা ঘাস বিক্রি করা হয়।

DSC00675
উল্যা ঘাস পানের বরজে ব্যবহার উপযোগী করতে কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই প্রসঙ্গে কৃষক গোফুর মিয়া জানান, জমি থেকে ঘাস কাটার পার তা ধান মেশিনের মাধ্যমে বাছাই করে আটি বেঁধে পানিতে ২ দিন ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর রোদে শুকিয়ে বড় আটি বেঁধে সেখানে থেকে ভালো ঘাসটি বাছাই করতে হয়। তিনি আরো জানান, ৩ফুট ও ৪ফুট মাপের ঘাসগুলো আলাদা করে বাছাই করে এর আগাগুলো কেটে আটি বাধা হয় এবং পান চাষীরা ১২ ইঞ্চি বরাবর ছেও (কেটে) দিয়ে পান বাধার কাজ করে।
কৃষক নুরুল হক বলেন, “আমাদের এইখানে বিক্রি উপযোগী হওয়ার আগে দুই রকমভাবে উল্যা ঘাস বিক্রি হয়। প্রথমত কেউ সরাসরি কাচা ঘাস কেটে এনে এখানে বিক্রি করে আবার অনেকে প্রক্রিয়াজাত করে এনে বিক্রি করে।” তিনি আরো বলেন, “প্রক্রিয়াজাত করে আনলে দাম ভালো পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কাচা ঘাস ৮শ থেকে ১০০০ টাকা ও শুকনা ঘাস ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়।”

DSC00673
সইপাড়া গ্রামের সফল ব্যবসায়ী আয়নাল হক জানান, মোহনপুর উপজেলা প্রতি শনি ও বুধবারের হাট ছাড়া এই এলাকার সকল হাটে এই ঘাস বিক্রি হয়। এই ঘাস নষ্ট হয় না, ৫ বছর পর্যন্ত মজুদ রাখা যায়। তিনি অরো জানান, প্রতিবছর ৫ কোটি টাকার উপরে এই ঘাস কেনা বেচা হয়। চাহিদা ও যোগানের উপর ভিত্তি করে এর দাম কম বেশি হয়। প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়।

এলাকার অন্যান্য কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উল্যা ঘাস এইখানকার চাহিদা মেটানোর পর কৃষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চট্রগ্রাম জেলায় সরবরাহ করা হয়। আবার কুষ্টিয়া থেকেও প্রক্রিয়াজাত ঘাস এইখানে বিক্রির জন্য আনা হয়। যোগান ও চাহিদার অবস্থার উপর ভিত্তি করে এটি পরিপুরকের কাজ করে। প্রকৃতির সামান্য উপাদানই বাঁচিয়ে রেখেছে সইপাড়া গ্রামসহ অসখ্য পরিবারের জীবিকায়ন।

happy wheels 2

Comments