পরিবেশ বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হক

আওলাদ হোসেন রনি

জাতিসংঘ দপ্তর থেকে চায়ের স্টল, টিভির পর্দা থেকে কৃষকের মন। সবখানেই একই প্রশ্ন। বলা চলে কোটি টাকার প্রশ্ন। আর প্রশ্নটি হচ্ছে- প্রকৃতির বিরূপ আচরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সাত বছর 20170924_130809বয়সী শিশু- সবাই এই ভরা শরতেও আকাশে দিকে তাকিয়ে ভরা পূর্ণিমায় আকাশে বজ্রপাত দিকে অবাক হন। হলিউড, বলিউড, টালিউড, পৃথিবীর বড়ো বড়ো দৈনিক-পাক্ষিক-মাসিক পত্রিকার ‘হট ইস্যু’ প্রকৃতির এই বিরূপতা বা জলবায়ূ পরিবর্তন বা কার্বণ নিঃসরণ। সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি সবখানেই ‘প্রভাব’ ফেলছে এই ‘জলবায়ূ পরিবর্তন’। গবেষকদের অভিধানে যুক্ত হয়েছে নতুন শব্দ ‘জলবায়ূ উদ্বাস্তু’। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে দুনিয়াজুড়ে পরিবেশবাদী ব্যক্তি-গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান যখন এ বিষয়ে দেন দরবারে ব্যস্ত, বাংলাদেশ তখন যাপন করচে এক অনভ্যস্ত জীবন। তাহলে- পৃথিবীর স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য মানুষের কি কিছুই করবার নেই? আছে- বৃক্ষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন ‘বৃক্ষ বন্দনা’ কবিতায় যেমন বলেছিলেন- ‘অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে তুমি শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান/ প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ।’ পৃথিবীর এই স্বাস্থ্যমন্দার দিনে বৃক্ষই মুমূর্ষ পৃথিবীর একমাত্র পথ্য। ‘প্রাণের প্রথম জাগরণ’ বৃক্ষের এ উপলব্ধি থেকেই হয়তো কোলকাতার কণ্ঠশিল্পী অনুপম চ্যাটার্জি গেয়েছেন- ‘এবার মললে গাছ হবো।’ জীবনের বিনিময়ে না হলেও মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত পৃথিবীর স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য গাছ লাগানো। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর আবিষ্কৃত ‘বৃক্ষের প্রাণ’ই এখন পৃথিবীর প্রাণ।

20170924_130138
পৃথিবী নামক আশ্চর্য এ গ্রহের বুদ্ধিমান বাসিন্দা হিসেবে মানুষের আশু কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হক। এক্ষেত্রে তিনি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার দরুণবালী গ্রামের কানাডা প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হক। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হক সদরের আব্বাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বালী-তে উপহার হিসেবে দিয়েছে ১৬০০ গাছের চারা। আমলকি-৬০০, মেহগনি- ৮০০ এবং পেয়ারা- ২০০টি চারা স্কুলের সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে দুইটি করে গাছের চারা বিতরণ করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হকে সহপাঠী এবং আব্বাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বালী- এর সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মো. আব্দুস শহীদ স্যার বলেন- ‘ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হক এ বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। একটি আমলকি গাছ মানুষের জন্য ব্যাপক উপকারি। মেহগনি এবং পেয়ারা গাছ বাড়ির আঙিনায় লাগাতে এবং পরিচর্যা করতে সহজ। তাই আমরা তাঁর মত অনুসারেই গাছের চারা নির্বাচন করেছি।’ এ প্রসঙ্গে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জনপ্রিয় শিক্ষক মো. আলী ওসমান স্যার বলেন- ‘আমরা তাঁর এই কর্মকান্ডকে স্বাগত জানাই। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা শিক্ষার্থীদেরকে বলেছি গাছ জায়গামতো লাগাতে এবং পরিচর্যা করতে। আমরা এই বিষয়টি তদারকি করবো। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হক সাহেব একটি সময়োচিত কাজ করেছেন। আমরা আশা করবো সমাজের বিত্তবান মানুষেরা তাঁর মতো এমন কাছে এগিয়ে আসবেন।’ আমলকি এবং পেয়ারা গাছের চারা পেয়ে খুশি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মো. শুভ মিয়া বলেছে- ‘গাছ আমাদের অনেক উপকার করে। আমরা বাড়িতে এ গাছ লাগাবো এবং পরিচর্যা করবো।’

20170924_130448
তবে ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হকের এমন কর্মকান্ড নতুন নয়। তিনি এর আগে তাঁর মেয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে আসা প্রত্যেক অতিথিকেই একটি করে গাছ উপহার দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বৌভাতে আসা কোন অতিথির কাছ থেকেই কোন ধরণের উপহার-উপঢৌকন নেননি। এরও আগে তিনি কাইলাটী ইউনিয়নের তিনটি বিলে বিপুল পরিমাণ মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। আগামীতে তিনি একটি মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করতে চান। তাঁর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে এলাকাবাসীও ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আশপাশের গ্রামে প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হক এখন পরিবেশ বন্ধু হিসেবে পরিচিত।

ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হক নেত্রকোনা সদরের দরুনবালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাসিম উদ্দিন ছিলেন নেত্রকোনা কোর্টের আইন ব্যবসায়ী। ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হক বালী স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর ভর্তি হন নেত্রকোনা শহরের আঞ্জুমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মেট্রিক পাশ করেন। নেত্রকোনা কলেজ থেকে পাশ করেন আইএ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিভাগে উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করেন। বর্তমানে তিনি কানাডাতে প্রকৌশলি হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর স্ত্রী, ১ পুত্র ও ১ কন্যা নিয়ে তাঁর প্রবাস জীবন।

ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হকের এই কর্মোদ্যোগ পৃথিবীর ভগ্নস্বাস্থ্য পুনোরুদ্ধারে আদর্শ হবে এমনটাই আমরা আশা করি। বিত্তবান মানুষের চোখ খুলে দিতে তাঁর এই উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সবুজ মনের পরিবেশ বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল হকের জন্য রইলো আমাদের অফুরান ভালোবাসা।

happy wheels 2

Comments