বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
“আমরা ফুটবল ভালোবাসি” বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে এমন করেই তাদের অনুভূতি প্রকাশ করছিল প্রত্যয় কিশোরী সংগঠনের সদস্যরা। মানিকগঞ্জ জেলার জাগীর ইউনিয়নের চরমত্ত গ্রাম। সেই গ্রামেরই একদল কিশোরী (ফুটবল টীম) ফুটবল খেলতে খুব ভালোবাসে। ফুটবলের প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা। ২০১৬ সালে তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে বারসিক তাদের সংগঠিত হতে সহযোগিতা করেছে। কিশোরীরা ১৫ জন মিলে গড়ে তোলে “প্রত্যয় কিশোরী সংগঠন” নামে একটি সংগঠন। সেই থেকে তাদের পথচলা।
“ভালোবাসা” শব্দটি সবচেয়ে মধুর কোমল ও হৃদয়স্পর্শী অনুভূতি। ভালোবাসা শব্দটি খুব সহজেই সকলের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে মিশে যায়। কেননা জন্মের পর থেকেই মানুষের বেড়ে উঠা এই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করেই। ভালোবাসা নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গল্প, উপন্যাস, অনেক পৌরাণিক কাহিনী। সাহিত্য- শিল্প-সংস্কৃতি প্রতিটি অঙ্গনেই ভালোবাসার ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ঋতুরাজ বসন্তের আগমন উপলক্ষে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এ প্রত্যয় কিশোরী সংগঠনের সদস্যরা আড্ডা আসরে বসে। আড্ডা শেষে মাঠে ফুটবল খেলা। ফুটবল খেলার প্রতি তাদের যে ভালোবাসা তা নিয়ে মজার মজার স্মৃতিচারণ করতে থাকে। ওদের দলের অধিনায়ক খাদিজা আক্তার বলে, “আমি তো সেই ক্লাস টু-থ্রি পড়া অবস্থায় ফুটবল খেলতাম। ফুটবল খেলার প্রতি আমার আগ্রহ দেখে আমার আব্বা আমাকে একটি বল কিনে দিয়েছিল। তখন বাড়িতে আশেপাশের বাচ্চাদের সাথে খেলতাম। ২০১৬ সালে ৫ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় প্রথম আমরা সবাই স্কুল থেকে বিভিন্ন স্কুলে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা কাপ খেলতে যাই। সেই থেকে আমাদের খেলা শুরু।”
শুধু স্কুলে খেলার মধ্য দিয়েই তাদের খেলা থেমে নেই। তারা মানিকগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থায় যোগাযোগ করে। সেখানে খাদিজা আক্তার ও আকলিমা আক্তার জেলা পর্যায় খেলার বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। শুরু হয় অনুশীলন। জেলা অনুর্ধ্ব- ১৪ নারী ফুটবল দলের হয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জেএফএ অনুর্ধ্ব- ১৪ জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ ২০১৭ তে অংশ নেয়। কিশোরীরা (ফুটবল টীম) স্বপ্ন দেখছে একদিন তারা জাতীয় দলে খেলবে। মানিকগঞ্জের হয়ে সুনাম বয়ে আনবে। ফুটবল খেলার প্রতি তাদের এই অকৃত্রিম ভালোবাসা অনুভব করে বারসিক বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তাদের হাতে একটি ফুটবল তুলে দিয়ে ভালোবাসার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
গতকাল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা দিবসে আমরা অনেকেই আমাদের প্রিয়জনদের ভালোবাসার কথা বলি। তাদের হাতে উপহার তুলে দেই। কিন্তু অনেক সময়ই আমার আশেপাশের মানুষের কথা, প্রাণ- প্রকৃতির কথা ভাবার অবকাশ পাইনা। ভালোবাসা দিবসে কিশোরীদের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার এই উদাহরণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমাদের অঙ্গীকার হোক- শুধু মানুষের প্রতি ভালোবাসা নয়, ভালোবাসা হোক সকল মানুষ, সকল প্রাণের প্রতি। সকল প্রাণি তার নিজ আবাসস্থলে নিরাপদ থাক। প্রতিষ্ঠিত হোক বহুত্ববাদী সমাজ।
উল্লেখ্য, গতকাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খিষ্টধর্ম প্রচারক। আর রোম স¤্রাট ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূঁজায় বিশ্বাসী। ঐ স¤্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূঁজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় স¤্রাট তাকে কারারুদ্ধ করেন। কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুগল প্রতিদিন তার সাথে দেখা করতো এবং তাকে ফুল উপহার দিত। এক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ে ভ্যালেন্টাইকে দেখতে যেত। ভ্যালেন্টাইন তার সাথে কথা বলতে বলতে তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। এই ভালোবাসার কথা স¤্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ২৬৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিনটিকে স্মরণ করে রাখার উদ্দেশ্যে তখন প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল এই দিনটি তাদের ভালোবাসা দিবস হিসাবে পালন করতো।