গবেষণার প্রাথমিক আলোচনা
ঢাকা থেকে বাহাউদ্দীন বাহার
গবেষণা বলতে কী বুঝি?
বাংলা গবেষণা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত গবেষ শব্দ থেকে। ঋগবেদে প্রাপ্ত এই শব্দটির অর্থ অন্বেষণ বা অনুসন্ধান। গবেষণা = গবেষ + অণ + আ । ইংরেজী Research শব্দটির ব্যুৎপত্তি ফরাসী recerche থেকে, যার অর্থ বিস্তারিত অনুসন্ধান। আবার Research মানে Re-search অর্থাৎ পুনরায় অনুসন্ধান, এভাবেও ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। আমরা কোন কিছুর অনুসন্ধান করছি, প্রথমবার অনুসন্ধান করার পর পাওয়া গেলনা, তাহলে পুনরায় অনুসন্ধান করতে হবে, আবারও যদি না পাওয়া যায়, আবারও অনুসন্ধান করতে হবে, এভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত পাওয়া না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত অনুসন্ধান চলবে।
গবেষণা (ইংরেজি: Research) হল মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় বিজ্ঞানীদের কার্যাবলী। যিনি গবেষণা করেন বা গবেষণা কর্মের সাথে জড়িত, তিনি গবেষক বা গবেষণাকারী নামে পরিচিত।
গবেষণা হলো নতুন তথ্য আবিষ্কার করে বর্তমান জ্ঞান বৃদ্ধি বা সংশোধনের নিমিত্তে পদ্ধতিগত অনুসন্ধানী প্রক্রিয়া। গবেষণার মাধ্যমে সত্যের অনুসন্ধান করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সত্যকে না পাওয়া যায় ততক্ষণ পর্যন্ত অবিরাম এই খোঁজ চলতেই থাকে। সত্যকে জেনে সেই সত্যকে প্রকাশ করার সাহসিকতাই গবেষণা। সত্য খুঁজে না পেয়ে মিথ্যা বলা বা সত্য খুঁজে পেয়েও উদ্দেশ্যমূলকভাবে সত্যকে গোপন করে মিথ্যা প্রকাশ করা গবেষণা নয়। গবেষণার তিনটি ধাপ রয়েছে:
প্রথমটি প্রশ্ন উত্থাপন করা, দ্বিতীয়টি প্রশ্নের উত্তর তথ্য সংগ্রহ, এবং তৃতীয়টি প্রশ্নের প্রাপ্ত উত্তরটি যথাযথভাবে উপস্থাপন করা। যেকোন গবেষণায় নতুনত্ব (novelty) থাকতেই হবে। অর্থাৎ ইতিপূর্বে মানবজাতির জানা ছিলোনা এমন সত্য আবিষ্কার এখানে থাকতেই হবে। নতুনত্ব (novelty) না থাকলে সেটাকে গবেষণা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া যায়না। গবেষণা হলো সেই নিয়মাবদ্ধ (systematic) পথ যেখানে চলে আমরা নিজেদেরকে শিক্ষিত করে তুলি।
ধর্মবিশ্বাস ও বিজ্ঞান উভয়ের মতেই এই জগৎ এর সর্বশেষ সন্তান হলো মানুষ। তাহলে জগতে যা ঘটার তার প্রায় সবটুকুই ঘটে গেছে মানবজাতির আগমনের আগে। একারণেই মানব জাতির জ্ঞানভান্ডার এত ক্ষুদ্র। জগৎ-সংসার সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে মানুষ প্রথমে যেটা করতে পারে তা হলো ধারণা। কিন্তু ধারণার সাথে বাস্তবের মিল থাকবে এমন নিশ্চয়তা দেয়া অসম্ভব। বাস্তব সত্যটি কি এটা জানার একমাত্র পথটিই হলো গবেষণা। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল আমাকে যাচাই করে দেবে সত্যের সাথে আমাদের ধারণার কতটুকু মিল বা অমিল আছে। একারণেই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের বলেছেন, ‘সকল গবেষণাই হলো মানুষের ধারণার (idea) জগৎ ও প্রপঞ্চ (phenomena)-এর জগৎ মধ্যকার পার্থক্য (gap) কমিয়ে আনা।’
গবেষণার গুরুত্ব
মানবজীবনে গবেষণার গুরুত্ব কি বলার আগে আসুন আলোচনা করি মানবজীবনের উদ্দেশ্য কি? এই নিয়ে অনাদিকাল থেকেই দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা আলোচনা করে গেছেন ও যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে গেছেন। জ্ঞানগর্ভ আলোচনার সেই মহাসাগর সেঁচে যে দুটো মুক্তা তুলে আনা যায় তা হলো-
১। মানবজীবনের দৈনন্দিন জীবনের আরাম-আয়েশগুলো বৃদ্ধি করা (অন্যকথায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা),
২। সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন করা (জীবনের অর্থ খুঁজে বের করা)।
এই দুটি কাজ করার জন্য গবেষণার কোন বিকল্প নেই। মনে করি কোন একটি এলাকায় কোন একটি সমস্যা (জলাবদ্ধতা ও শুষ্কতা) প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই সমস্যা চরম আকার ধারণ করে তা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে নিত্য নতুন জটিলতার সৃষ্টি করছে। আমাদের করণীয় কি? নিঃসন্দেহে এই ভয়াবহতার হাত থেকে সকলকে উদ্ধার করাই আমাদের কর্তব্য। এটা করতে হলে আমাদের প্রথমে সমস্যার কারণ খুঁজে বের করতে হবে, তারপর কি করে তা দমন করা যায় সেই উপায় আবিষ্কার করতে হবে। এই সব কিছু গবেষণা করেই করা সম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ- এক সময় আহত মানুষের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তার শরীরে পশুর রক্ত দেয়া হতো, এতে রোগীর মৃত্যু হতো। তারপর মানুষের রক্ত দেয়া শুরু হলো। সেখানে দেখা গেলো কিছু মানুষ বেঁচে যায় আবার কিছু মানুষ মরে যায়। কেন? তবে আশার আলো দেখা গেলো যে কিছু মানুষ বেঁচে যাচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের শরীরে মানুষের রক্ত দান করে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এখন প্রয়োজন জানা যারা মারা যাচ্ছে তারা মারা যাচ্ছে কেন? অনেক অনুসন্ধানের পরে মানুষের ব্লাড গ্রুপ সম্পর্কে জানা গেলো ।
গবেষণার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এই সেদিনও ডায়রিয়ায় গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। কিন্তু বাঙালী ডাক্তারদের অক্লান্ত সাধনা আর গবেষণার ফলে আবিষ্কৃত ওরস্যালাইনের কল্যাণে আজ ডায়রিয়া জীবনবিনাশী কোন অসুখই নয়। যেমন আমাদের রয়েছে বিদেশ নির্ভরতা ও স্বদেশ বিপর্যয়। কেন এই নির্ভরতা ও বিপর্যয়? পাশাপাশি এ থেকে উত্তরণের পথ কি? এইগুলো বুঝতে হলে ও উত্তরণ পেতে হলে প্রয়োজন যথাযথ গবেষণার। ৪৭ বছর পরেও আমরা বাংলাদেশীরা উন্নয়নের মুখ দেখতে পাচ্ছি না। অগ্রগতির ধারা অত্যন্ত শ্লথ। কেন? এটা বুঝতে হলেও প্রয়োজন গবেষণার। আবার অনেকে এর জন্য জাতীয় রাজনীতিকেই দায়ী করে থাকেন। সেক্ষেত্রে গতানুগতিক রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে কি করে যুগপোযোগী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা যায় সেটা আবিষ্কার করতে হলেও প্রয়োজন গবেষণার। এককথায় যেকোন সমস্যা সূত্রাকারে বা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত (formulate) করা, তার সমাধান খুঁজে বের করা ও তা প্রকাশ্যে উপস্থাপন করা এই পুরো পদ্ধতিটিই গবেষণা। গবেষণা ছাড়া উদ্ভুত যে কোন সমস্যা বোঝা যেমন সম্ভব না তেমনি তা সমাধান করাও সম্ভব না।
তথ্য ও উপাত্তের উৎস
তথ্য ও উপাত্তের উৎসের (সোর্স) উপর ভিত্তি করে উপাত্ত দুই রকমের হতে পারে;
১) প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত, এবং
২) মাধ্যমিক তথ্য-উপাত্ত।
গবেষণা ধাপসমূহ
গবেষণা সাধারণত বালিঘড়ি মডেল-কাঠামোর ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এই মডেল-কাঠামো অনুসারে গবেষণা শুরু হয় একটি বিস্তৃত কাঠামোকে কেন্দ্র করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সেটি সংক্ষেপিত হতে থাকে। যেখানে নির্দিষ্ট প্রজেক্ট বা উদ্দেশ্যের আওতায় প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ, ফলাফল উপস্থাপন এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা সন্নিবেশিত করা হয়।
গবেষণার প্রধান ধাপসমূহ হচ্ছে:
- গবেষণার সমস্যা চিহ্নিতকরণ
- প্রাসঙ্গিক গবেষণা ও তথ্য পর্যালোচনা
- গবেষণার সমস্যা নির্দিষ্টকরণ
- অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও গবেষণার প্রশ্ন নির্দিষ্টকরণ
- তথ্য সংগ্রহ
- তথ্য বিশ্লেষণ ও বর্ণনাকরণ
- প্রতিবেদন তৈরি
চিত্র-১: গবেষণা পদ্ধতির ধাপসমূহ
গবেষণার সমস্যা চিহ্নিতকরণ বা গবেষণার উদ্দেশ্য
যে কোন গবেষণার প্রথম ধাপ হল গবেষণার উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে এবং সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে, অর্থাৎ গবেষণা চলাকালীন সময়ে উদ্দেশ্য পরিবর্তন করা যাবে না। এরপর আসে গবেষণার ফলাফল কিভাবে ব্যবহার করা হবে? যেমন ধরা যাক আপনি একটা গবেষণা করবেন এবং তার ফলাফল কি বাংলাদেশের সকল মানুষের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা করা হবে নাকি শুধুমাত্র কোন বিশেষ একটি জেলার মানুষ কাজে ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ আপনার টার্গেট পপুলেশন আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকতে হবে। এরপর আসবে নমুনা কিভাবে নেবেন সে বিষয়।
প্রাসঙ্গিক গবেষণা ও তথ্য পর্যালোচনা
বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখাতেই গবেষণার জন্য প্রয়োজন উপাত্ত। কি নিয়ে গবেষণা করা হবে বা কোন কোন প্রশ্নের উত্তর আমাদের বের করতে হবে সেটা ঠিক করার পরে আমাদের সাহিত্য পর্যালোচনা করতে হবে। অর্থাৎ আমরা যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি বা যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি সেসব প্রশ্নের উত্তর ইতোমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে কিনা, কিংবা একই ধরনের কোন গবেষণা অন্য কেউ কেরছে কিনা সেটা জানা প্রয়োজন। এতে করে একই গবেষণা দুইবার পরিচালনা করে সময় ও সম্পদের অপচয় রোধ করা যায়। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে পূর্ববর্তী গবেষণার ফল যাচাইয়ের জন্যও অনেক সময় গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সাহিত্য পর্যালোচনা করার পরে আমরা উপাত্ত সংগ্রহে নেমে পড়ি।
গবেষণার সমস্যা নির্দিষ্টকরণ
গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্য কিন্তু আরও বেশি সুনির্দিষ্ট করা। কারণ সমস্যার সকল বিষয় নিয়ে গবেষণা করা অনেক বেশি কঠিন, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। তাই সমস্যাকে আরও বেশি সুনির্দিষ্ট করতে হবে।
অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও গবেষণার প্রশ্ন নির্দিষ্টকরণ ও প্রশ্নমালা তৈরি
এরপর আপনি উপাত্ত সংগ্রহের জন্য প্রশ্নমালা তৈরি করবেন। প্রশ্নমালা তৈরির পরবর্তী ধাপটি হলো প্রশ্নমালা যাচাই। একটি পাইলটিং এর মাধ্যমে প্রশ্নমালা যাচাই করা হয় এবং প্রয়োজনে সংশোধন ও পরিবর্ধন করা হয়। পাইলটিং হলো খুবই ছোট আকারে একটি নমুনা তথ্য সংগ্রহ করা; যার মূল উদ্দেশ্য থাকে প্রশ্নপত্রটি (Questionnaire) মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাচাই করা। পাইলটিং এর মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের ছোটখাট অসঙ্গতি দূর করা হয়। অনেক সময় প্রশ্নের ক্রম বিন্যাসের পরিবর্তন আনা হয়। যে কোন বড় গবেষণার আগে পাইলটিং করা খুবই দরকারি।
তথ্য সংগ্রহ
তথ্য সংগ্রহের আগে তথ্য ও উপাত্ত সম্পর্কে আলোচনা করা। সাধারণত গবেষণার প্রয়োজনে আমরা তথ্য সংগ্রহ করি। আবার অনেক সময় তথ্য উপাত্ত যোগাড় করাই থাকে, এবং সেই উপাত্ত থেকেও গবেষণা শুরু হতে পারে। অর্থাৎ উপাত্ত আমাদের সামনে দুই ভাবে হাজির হতে পারে-
১. কতগুলো প্রশ্নের উত্তর বের করতে আমরা উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারি। যেমন নমুন জরিপ করে উপাত্ত সংগ্রহ করা, প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে বা অন্য কোন উৎস থেকে সেকেন্ডারি নমুনা সংগ্রহ করে;
২. আবার কোন প্রশ্ন আগে থেকে ঠিক করা নেই কিন্তু উপাত্ত আছে এমনটিও হতে পারে।
চলক (variable) সম্পর্কে ধারণা
চলককে ইংরেজিতে বলে variable, অর্থাৎ যা বদলায়। ‘বয়স’ একটি চলক। কারণ, এটির মান বদলে যাচ্ছে উত্তরপ্রদানকারীর উত্তরের উপর। একজন উত্তর-প্রদানকারীর বয়স ৫০ হতে পারে, আবার অন্য জনের বয়স হতে পারে ৩৫। অর্থাৎ বয়স কত হবে তা উত্তর প্রদানকারীর উপর নির্ভর করছে। তেমনিভাবে টাকার পরিমাণ একটি চলক।
চলকের প্রকারভেদ- চলক দুই রকমের হয়। যথা:
ক) গুণবাচক চলক (Qualitative variable)
খ) সংখ্যাবাচক চলক (Quantitative variable)
গুণবাচক চলক (Qualitative variable)
যেসব চলক কোন কিছুর গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে তারা গুণবাচক চলকের (Qualitative variable) অন্তর্ভূক্ত। যেমন- চুলের রঙ- এটি একটি গুণবাচক চলক। রঙ হতে পারে কালো, বাদামী, সাদা ইত্যাদি। এই যে রঙগুলো সাদা, বাদামী, কিংবা কালো। এগুলো চুলের একেকটি বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করছে।
সংখ্যাবাচক চলক (Quantitative variable)
অপরদিকে যেসব চলক সংখ্যা বা নম্বরকে মান হিসেবে গ্রহণ করে তারা সংখ্যাবাচক চলকের (Quantitative variable) অন্তর্ভূক্ত। যেমন- বয়স, তাপমাত্রা, টাকার পরিমাণ, গাড়ির গতিবেগ, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, মাসিক বেতন, ইত্যাদি।
চিত্র-২: চলকের প্রকারভেদ
সংখ্যাবাচক চলককে আমরা অর্থবহ উপায়ে যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করতে পারি। যেমন, দুই জনের বয়স একটি থেকে অপরটি বিয়োগ করলে আমরা এদের বয়সের পার্থক্য কত তা জানতে পারি। অনেক সময় গুণবাচক চলকের মান সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করা হয়। সাধারণত যেসব প্রশ্নের উত্তর শুধু হ্যাঁ অথবা না এর মধ্যে সীমাবদ্ধ সেসব চলকের মানগুলোকে সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা যায়। যেমন, আপনি পুরুষ না মহিলা এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হলে আমরা ১ বসাবো, আর উত্তর না হলে আমরা ০ (শুন্য) বসাবো। এখানে ১ এবং ০ দিয়ে যথাক্রমে হ্যাঁ এবং না বোঝানো হচ্ছে। এধরনের গুণবাচক চলক যদিও সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে, এই মানগুলোকে আমরা অর্থবহ উপায়ে যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ করতে পারবো না।
সংখ্যাবাচক চলক আবার দুই ধরনের। যথা: ডিসক্রিট ভ্যারিয়েবল (discrete variable) বা বিচ্ছিন্ন চলক এবং কন্টিনিউয়াস ভ্যারিয়েবল (Continuous variable) বা অবিচ্ছিন্ন চলক।
বিচ্ছিন্ন চলক (discrete variable)
সহজ ভাষায় বিচ্ছিন্ন চলক বলতে আমরা সেই চলককে বুঝি যা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট (বিচ্ছিন্ন বা ডিসক্রিট) সংখ্যা গ্রহণ করে। যেমন- কোন একটি দেশে মানুষের সংখ্যা বা একটি শ্রেণীকক্ষে ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা। এটি একটি বিচ্ছিন্ন চলক কারণ মানুষের সংখ্যা কেবল ১, ২, ৩, ২০, ৩০১ এরকম নির্দিষ্ট সংখ্যা হতে পারে। অবিচ্ছিন্ন চলক (Continuous variable) যেসব চলক পূর্ণ এবং অপূর্ণ সকল বাস্তব সংখ্যা (Real number) গ্রহণ করতে পারে, তাদের অবিচ্ছিন্ন চলক বা কন্টিনিউয়াস ভ্যারিয়েবল বলে। যেমন- বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। এটি একটি অবিচ্ছিন্ন চলক, কারণ, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০২.১২ ইঞ্চি হতে পারে, আবার আরো সুক্ষ্ম পরিমাপ করলে ১০২.১২২ ইঞ্চিও হতে পারে।
অন্যভাবে বলা যায় অবিচ্ছিন্ন চলক দুটি বাস্তব সংখ্যার অন্তর্গত যেকোন সংখ্যাই গ্রহণ করতে পারে। যেমন- বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যদি বলি ১০০ থেকে ১০২ ইঞ্চি, এর অর্থ দাঁড়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০০ইঞ্চি থেকে ১০২ ইঞ্চির মধ্যে যেকোনটি হতে পারে। অবিচ্ছিন্ন চলক বলেই এমনটি সম্ভব। অপরদিকে বিচ্ছিন্ন চলকের ক্ষেত্রে চলকটি ১০০ থেকে ১০২ এর মধ্যে কেবলমাত্র ১০০, ১০১ বা ১০২ সংখ্যামান গ্রহণ করতে পারবে। কোন ভগ্নাংশ মান গ্রহণ করতে পারবে না।
গবেষণার উদ্দেশ্য প্রকৃত সত্য উদঘাটন। সেই গবেষণা সব সময়ই হতে হবে উচ্চমান সম্পন্ন ও উপকারী। একটি সার্থক গবেষণা কেবলমাত্র তখনই সম্ভব যখন গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান থাকবে।
-ইন্টারনেটের বিভিন্ন মুক্ত সোর্স থেকে সংকলিত