মাছ ধরার ফাঁদ ‘খাদুন’ তৈরি আব্দুল গফুরের পেশা
মো. মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া (পাবনা) থেকে
বর্ষা মৌসুম এলে প্রতিবছর চলনবিলাঞ্চলের পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মাছ ধরার উৎসব পড়ে যায়। মৎস্য শিকারীরা জাল, পলো, বাদাই, বর্ষি, বাসুন, খাদুনসহ নানা রকমের ফাঁদ ব্যবহার করে মাছ ধরে থাকেন। বর্ষাকালে এ অঞ্চলের দিনমজুর শ্রেণির মানুষের তেমন কোন কাজ থাকেনা। তাই তারা এ কয়েক মাস মাছ ধরে তা হাট-বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। এছাড়া জেলেদের পাশপাশি অনেক সৌখিন মৎস্য শিকারী আছেন যারা মাছ ধরে আনন্দ পান।
বৃদ্ধ আব্দুল গফুর। বয়স ৬৫ বছর। মাছ শিকারে ব্যবহৃত ফাঁদ খাদুন তৈরি করা তাঁর পেশা। পাশের ফরিদপুর উপজেলার বিএলবাড়ি গ্রামে তাঁর বাড়ি। পিতার নাম মৃত আব্দুল মমিন প্রামাণিক। উপজেলার ভবানীপুর দিয়ার পাড়া গ্রামে মাছ ধরা খাদুন তৈরি করার জন্য আসলে কথা হ তিন সন্তানের জনক এ মানুষটির সাথে। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিবছর তিনি বর্ষা মৌসুম শুরুর অনেক আগ থেকেই খাদুন তৈরির কাজে লেগে পড়েন। কারও খাদুন তৈরির প্রয়োজন হলে তাঁকে খবর দিলে তিনি বাড়িতে গিয়ে তা তৈরি করে দিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমি ৫/৬টি খাদুন তৈরি করতে পারি। বিনিময় প্রতিদিন পারিশ্রমিক হিসেবে আমি পাই ৪০০ টাকা।’
আব্দুল গফুর অন্যসময় লোকের বাড়িতে দিনমজুরীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দীর্ঘ ১০/১২ বছর যাবত তিনি খাদুন তৈরি পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। খাদুন তৈরির কারিগর বৃদ্ধ আব্দুল গফুর আরও জানান, তাঁর বাপ-দাদাকে দেখেছেন খাদুন তৈরি করতে। তাদের কাছ থেকেই তিনি এ কাজ শেখেন। একটি ছেলে ও দুইটি মেয়ে তার। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর একমাত্র ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। তাই এ বয়সেও স্ত্রীকে নিয়ে নিজের সংসার নিজেকেই চালাতে হয়। এলাকার মৎস্য শিকারীদের খাদুন তৈরি করে দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার।
এবছর আব্দুল গফুর এ পর্যন্ত প্রায় ৩ শতাধিক খাদুন তৈরি করেছেন। এতে তার বেশ ভালো উপার্জন হয়েছে। এলাকার সৌখিন মৎস্যশিকারী গোলাম মোস্তফা সুজন বলেন, ‘মাছ ধরার জন্য সম্প্রতি আমি আব্দুৃল গফুরকে দিয়ে ১২টি খাদুন তৈরি করে নিয়েছি।’
জানা যায়, খাদুন তৈরি করতে প্রয়োজন হয় বাঁশের শলা, লই (এক প্রকারের গাছের লতা) ও কটসুতা। এক আটি লইয়ের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা। তা আবার সব জায়গায় এ লই পাওয়া যায় না। পাশের চাটমোহরসহ বিভিন্ন জায়গায় লইয়ের হাট বসে; সেখান থেকে কিনতে হয় লই। মৎস্যশিকারীরা জানান, নদীর ধার, ডোবা-নালায় খাদুন পেতে রাখলে শোল, বোয়াল, টাকি, কৈ প্রভৃতি মাছ পড়ে। উপজেলার মৎস্য শিকারীদের কাছে মাছ ধরার ফাঁদ খাদুন অনেক জনপ্রিয় হওয়ায় এটি ব্যবহার করে প্রতিবছর তারা মাছ শিকার করে থাকেন।