জীবনের প্রতিটি ধাপে আসা বাধা জয় করার মানসিকতা থাকতে হবে
রাজশাহী শহিদুল ইসলাম শহিদ
রাজশাহী তানোর উপজেলার গোকুল মথুরা গ্রামে নারীদের উদ্যোগ সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘লোকায়ত জ্ঞান বিষয়ক অভিজ্ঞজনের সফল কাহিনীর উঠান বৈঠক’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বারসিক ও গোকুল মথুরা কৃষক সংঘের আয়োজনে লোকায়ত জ্ঞান বিষয়ক সফল কাহিনীর উঠান বৈঠকটি অনুষ্ঠানটি হয়।
নারীরা সংসারে কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ ও লোকায়ত জ্ঞান সংরক্ষণ করে থাকেন। গৃহপালিত প্রাণী পালন, নার্সারি, শাক সবজি চাষ, কুটির শিল্প, সেলাই মেশিনের কাজ, ঔষধি গাছের নাম ও গুনাগুণ জানা, অচাষকৃত শাকের পরিচিতি ও ব্যবহার বাড়িতে বীজ সংরক্ষণসহ রয়েছে রকমারি হাতের কাজ। এসকল কাজ নারীরা তাদের নিজস্ব জ্ঞানের মাধ্যমেই করে থাকেন। অনেক নারী পড়ালেখা জানেন না অথচ স্থানীয় জ্ঞান সঞ্চয় করে স্বালম্বী হয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে তানোর উপজেলার হরিদেবপুর গ্রামের কবুলজান তার একটি দৃষ্টান্ত।
কবুলজান সংসার গড়ার শুরু থেকেই নিজ উদ্যোগে আয়ত্ব করেছেন পরিবেশবান্ধব চুলা তৈরির কাজ। পরিবারের সদস্য সংখ্যার উপর নির্ভর করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী চুলা তৈরি করতে পারেন তিনি। বর্তমানে একটি চুলা তৈরির ফি হিসেবে ২৫০-৩০০ টাকা আয় করেন। এতে তার হাতের কাজ ছাড়া আর কিছুই বিনিয়োগ করতে হয় না। নিজের উপজেলা ও জেলা পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী তিনটি জেলার কিছু কিছু গ্রাম পর্যন্ত চুলা বানিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি বাড়িতে রয়েছে বৈচিত্র্যময় ফল ও সবজির বাগান। ফলে এসেছে সংসারে স্বচ্ছলতা। তার উদ্যোগের কারণেই উপজেলা থেকে জয়িতা নারী হিসেবে ২০১৪ সালে সম্মাননা পেয়েছেন।
সেই নারীর সফল কাহিনী শোনার জন্য এখানে নারীরা সমবেত হয়েছেন। তিনি তার সফলতার কাহিনী বলতে গিয়ে অংশগ্রহণকারীদের উদেশ্যে বলেন, ‘এসব কাজ করার সময় আমার জীবনে অনেক বাধাও এসেছে। পরিবারে স্বামী, সন্তান ছাড়াও সামাজিক অনেক বাধা এসেছে আমার জীবনে। এসব বাধা অতিক্রম করার পর সফলতা আসায় এখন তারাই আমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাই কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে হলে ধাপে ধাপে বাধা আসতে পারে, এসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে না পারলে সফলতার মুখ দেখা সম্ভব নয়। ছাব্বিশ বছর সাধনার পরে আমাকে উপজেলা থেকে সম্মাননা প্রদান করেন। তাই পাছে লোকের কথায় কান না দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে সফলতা ধরা দিবে নিশ্চিত।’
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নারীরা তাদের ছোট ছোট উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। সেই উদ্যোগগুলো এগিয়ে নেওয়ার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন। উক্ত উঠান বৈঠকে জয়িতা নারী কবুলজান সহায়কের ভুমিকা পালন করেন। পাড়ার সকল নারীদের উপস্থিতে গ্রামের প্রবীণ রমেন্দ্রনাথ সুত্রধর সভাপ্রধান হিসেবে জানান, এধরনের উঠান বৈঠক নারীদের সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত করবে ও তাদের স্বনির্ভর হতে সহায়তা করবে।