একজন জয়িতা’র গল্প
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক উত্তম চর্চাসমূহের মধ্যে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রম একটি উল্লেকযোগ্য কার্যক্রম। জয়িতা হচ্ছেন সেই নারী যিনি সমাজের সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। জয়িতা একটি প্রতীকী নাম। ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত নারীদের সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। এই পাঁচটি ক্যাটাগরি হলো-
১. অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী
২. শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী
৩. সফল জননী নারী
৪. নির্যাতনের বিভিষীকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী এবং
৫. সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী।
প্রতিবারের মতো এবারও আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস (৯ ডিসেম্বর) উপলক্ষে নেত্রকোনা জেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘জয়িতা সম্মাননা- ২০১৯’ প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অন্যান্য ক্যাটাগরির পাশাপাশি এ বছর লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের রুপা আক্তার ‘নির্যাতনের বিভিষীকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী’ এই ক্যাটাগরিতে জেলা পর্যায়ে ‘জয়িতা’ নির্বাচিত হয়েছেন।
সম্মাননা হিসেবে একটি ক্রেস্ট ও একটি সনদপত্র প্রদান করা হয় তাঁকে। আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেত্রকোনা জেলা প্রসাশক মঈনউল ইসলাম তাঁর হাতে সম্মাননা তুলে দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নেত্রকোনা সংরক্ষিত মহিলা আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান শেফালি, বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার মো: আকবর আলী মুন্সী, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌসী বেগমসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকগণ।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমিও আজকে এই পর্যন্ত এসেছি অনেক বন্ধুর পথ মাড়িয়ে। আমার চলার রাস্তাটা মসৃন ছিলনা। কিন্তু আমি দৃঢ় মনোবল আর সংকল্প নিয়ে পথ চলে নিজের পথকে মসৃন করেছি। আপনারাও সেভাবে এগিয়ে যাবেন আশা করি।’ জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রতিটি নারী এক একটি শিক্ষাকেন্দ্র, জ্ঞানের ভাণ্ডার। তাঁদেরকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। তাঁদের জন্যই আমাদের সমাজ টিকে আছে। নারীদের এগিয়ে নিতে হলে, সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে হবে। আজকের এই জয়িতারা আগামী প্রজন্মের নারীদের নিজেকে গতিশীল করতে অনুপ্রাণিত করবে। তাঁদের মাধ্যমে সমগ্র সমাজ নারী বান্ধব হবে।’ তিনি মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারেও গুরুত্ব দেন এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
এখানে উল্লখ্য যে, বারসিক’র নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গ্রামীণ নারী সম্মাননার আওতায় ২০১৮ সালে রুপা আক্তারকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ইউনিয়ন পরিষেদের সচিবসহ লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও যুব সংগঠনের সদস্যদের উপস্থিতিতে দোকান চালানোর জন্য কিছু উপকরণ প্রদান করা হয়েছিল। উপকরণসমূহ হচ্ছে একটি কাঠের শোকেস, ট্রে-২টি, কাপ-১২টি, মসলা রাখার বৈয়াম-১০টি, চা তৈরি করার জন্য কয়েক রকম মসলা এবং একটি ব্যানার ।