কৃষিসেবার জন্য কৃষক সংগঠনের সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়ানোসহ যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শিমুল বিশ্বাস
‘প্রকৃতিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থায় বাংলার কৃষি তথা কৃষকের সমস্যার অন্ত নেই। কৃষি পণ্যের দাম রেড়েছে কিন্তু পণ্য উৎপাদনকারী কতটা পেয়েছে এ প্রশ্ন সাধারণ কৃষকের। রয়েছে সরকারি সেবা সহযোগিতার বণ্টন ব্যবস্থায় অনিয়ম। তাছাড়া জমি লীজের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা, সারের ডিলারের ভুল পরামর্শ ও কোম্পানির প্রলোভন, অপর্যাপ্ত সেবা সহযোগিতা, সঠিক তথ্যের অভাব, বন্যা পরবর্তী গো-খাদ্যের সংকট, পারস্পারিক সম্পর্কের ঘাটতিসহ নানা সমস্যায় কৃষক জর্জরিত।’ সিংগাইর উপজেলায় সম্প্রতি আয়োজিত কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সমন্বয় সভায় এসব সমস্যা তুলে ধরেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম সংগঠন থেকে আগত প্রতিনিধিগণ।
সিংগাইর উপজেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠন এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সমন্বয় সভা কৃষি ও কৃষকের বর্তমান অবস্থার নিরিখে পারস্পারিক অভিজ্ঞতা সহভাগিতা এবং চলমান সংকট নিরসনে সাংগঠনিক উদ্যোগ বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করা হয়। উপজেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি ইব্রাহিম মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি সেলিনা বেগম, ফরহাদ হোসন, সাধারণ সম্পাদক ইমান আলী, কোষাদক্ষ মোজাম্মেল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ই¯্রাফিল হোসেন, কার্যকরী সদস্য মো. নাসির উদ্দিন, বারসিক মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, কর্মসুচী কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মাসুদুর রহমান, সহযোগি কর্মসুচী কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান, বিউটি সরকার প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ‘মহামারী করোনার কারণে কৃষক অনেক ক্ষতির শিকার হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক লকডাউনজনিত কারণে উৎপাদিত ফসল বাজারে সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে পারেন নাই। আবার বন্যার কারণে বর্ষা মৌসুমের সকল কৃষি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সেই তুলনায় সরকারি ভতর্ুূকির পরিমাণ কম।’ সরকারি অুনদান যা এসেছে সেখানে সুষ্ঠু বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিলো বলে তারা মনে করছেন।
তারা আরো বলেন, ‘করোনা ও বন্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। এ অবস্থায় তাদের ভাবতে হচ্ছে আগামী দিনের ফসল উৎপাদন, সংসার চালানোসহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ঠিক রাখার কথা।’ এ প্রসংগে কৃষি উন্নয়নের সংগঠনের সহ-সভাপতি সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমরা কিভাবে বাঁচবো ? ফসল নষ্ট হলো কৃষকের, ফসলের প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হলো কৃষক। অথচ কাজ না করেও বেতন পাচ্ছে চাকুরীজীবিরা। করোনাকালিন সময়ে স্কুল বন্ধ ছিলো, তবুও স্কুল থেকে পুরো বেতন নেওয়া হচ্ছে। কৃষকের ক্ষতি হলেও কোন ভর্তুকি নাই। অথচ চাকুরীজীবিরা কাজ করেও বেতন পাচ্ছে।’
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে আলু, পেঁয়াজসহ সকল পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু কৃষকরে কাছে এসব পণ্য নাই।” তিনি মনে করেন, ভোক্তা অধিকার আইনের বাস্তবায়ন সংকট, অর্থ্যাৎ বাজার মনিটরিং নেই।
সভাপতির বক্তব্যে ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘অনেক সময় ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে আমাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়ানো পাশাপাশি যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে।’
আলোচনার মাধ্যমে কৃষি তথা কৃষকের সমস্যার বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে করণীয় কিছু দিক উঠে আসে। বিশেষত: জমির মালিকদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করা, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদক তৈরি করা, নিজেদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি করা, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ কৃদ্ধি ও সম্পর্ক উন্নয়ন করা, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সাথে আলোচনা করা, ফসল সংরক্ষণাগার তৈরির দাবি উত্থাপন, দশ টাকার ব্যাংক একাউন্টের ব্যবহার বৃদ্ধি, সরকারি ঋণ প্রাপ্তির উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়গুলো ছিলো অন্যতম।