নারী অধিকার অর্জনে নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে

সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
পরিবার, সমাজ, কিংবা রাষ্ট্রের সাফল্যের পেছনে নারী ও পুরুষের সমান অবদান অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। নারীদেরকে বাদ দিয়ে পুরষের একক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের কথা চিন্তা করা যায় না। কিন্তু যুগ যুগ ধরে নারীরা অবহেলিত ও শোষিত হয়ে আসছে। পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সামাজিক ব্যবস্থায় সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে নারীরা তাদের অধিকার বিসর্জন দিয়ে আসছেন প্রতিদিন। নারীরা তাদের প্রতিভার বিকাশ ও আত্মপ্রকাশ ঘটানোর সুযোগ থেকে ক্রমে ক্রমেই বঞ্চিত হচ্ছে। নারীকে পূর্ণ মর্যাদা প্রদান তাদের মেধা ও শ্রমকে শক্তিতে রূপান্তর করে এবং তাকে আত্মনির্ভরশীল করার মাধ্যমে পরিবার সমাজ, রাষ্ট্র নির্বিশেষে সকল নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।

কেননা নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রে বিদ্যমান জেন্ডার অসমতা ও বৈষম্য ক্ষুধামুক্ত আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার পথে একটি বড় অন্তরায়। আবার সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী। কিন্তু অর্ধেক জনগোষ্ঠীর এই নারীদের শৃঙ্খলবন্ধী রেখে টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয়। সেই চেতনা থেকে নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যমান বৈষম্য ও অসমতা দূর করার লক্ষ্যে একটি নতুন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রত্যাশায় বারসিক মানিকগঞ্জের প্রায় দুই শতটির অধিক গ্রামে, নারী সংগঠন, কিশোরী সংগঠন, কৃষক সংগঠন, যুব সংগঠন, সাংষ্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন তৈরিতে সহায়তা করে তৃণমূল পর্যায়ে একদল ও চিন্তাশীল নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে ‘নারী নেতৃত্ব উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রেখেছে। তাছাড়া নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ সৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ব তৈরিতে নারীদের সংগঠিত করে তাদের ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তা তৈরি, জেন্ডার উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, নারী নেতৃত্ব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ আয়োজনের মাধ্যমে নারীদের দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত করছে।

সেই ধারাবাহিকতায় তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব তৈরিতে সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের ব্রী-কালিয়াকৈর নয়াপাড়া কৃষক কৃষাণি সংগঠনের উদ্যোগে নারী নেতৃত্ব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ আয়োজনে সহায়তা করে বারসিক। বারসিক কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান প্রশিক্ষণের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে সংগঠনের সহ-সভপাতি রমেলা বেগমের সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণে সহায়ক হিসেবে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন বলধারা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধি ও বাংগালা নবকৃষক কৃষাণি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সেলিনা বেগম ও বারসিক কর্মকর্তা শিমুল কুমার বিশ্বাস।

প্রশিক্ষণে সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন দেখছি, সহিংসতার ভয় প্রতিনিয়ত কীভাবে একজন মেয়ে, একজন কিশোরী, একজন তরুণী এবং একজন নারীর বিকাশ, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার, শিক্ষা-কর্মসংস্থান-নেতৃত্ব-সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে নিরুৎসাহিত করছে। এ ধরনের ভয় ভীতি নারী নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। তারা পারিবার থেকেই নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়ে বড় হতে থাকে। তারপর সমাজের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্বামীর সংসারে আসার পরও তারা অবহেলা, অবজ্ঞা ও প্রবঞ্চনা বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখতাম একদিন নারীরা তার সমান অধিকার পাবে, পরিবার ও সমাজে নারী মর্যাদা বাড়বে। মর্যাদা ও অধিকার অর্জনে নারীকে পরিবার থেকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। নারীকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে হবে।’

বারসিক কর্মকর্তা শিমুল কমুার বিশ্বাস বলেন, ‘আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে নারীদের নেতৃত্ব প্রদানের বিষয়টিকে সব সময় শৃঙ্খলবন্দী করে রাখা হয়েছে। আমরা দেখেছি যে নারী অধিকার রক্ষার চ্যালেঞ্জ, প্রতিনিয়তই আলোচনার মধ্যেই হারিয়ে যায়। নারী-পুরুষের মধ্যকার অসমতা ও বৈষম্য দূর করে নারীকে পুরুষের সমকক্ষে প্রতিষ্ঠিত করতে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষমতায়ন করতে হলে নারীকে ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে।’

ব্রী-কালিয়াকৈর সংগঠনের সভাপতি মো. হযরত আলী বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশকে নারীর ক্ষমতায়নে সফল রাষ্ট্র বলা যায়। এ কথা বলা যায় যে বাংলাদেশে নারী নেতৃত্বর অঙ্গন প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী পুরুষের সমান অধিকার স্বীকৃত। তাহলে সংবিধানের মতে, দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর পিছিয়ে থাকার কোন যুক্ত সঙ্গত কারণ নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নারী পুরুষ উভয়ই পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সমান অংশীদার।’

happy wheels 2

Comments