সমতাভিক্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক
সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
হরিরামপুর উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের আয়োজনে ৩১তম আন্তর্জাতিক ও ২৪তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল। উক্ত দিবস পালনে হরিরামপুর উপজেলা প্রশাসন, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, সিআরপি, এমডিপিওডি ও বারসিক সহযোগিতা করে। এই উপলক্ষে হরিরামপুর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা শেষে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র মানিকগঞ্জের সহযোগিতায় ৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হুইল চেয়ার ও ৫ সাদাছড়ি বিতরণ করা হয়। সরকারিভাবে দিবসটি ৩ ডিসেম্বর-২১ উদযাপন হলেও হরিরামপুর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে ৬ ডিসেম্বর ২১ উদযাপন করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপত্বিত করেন হরিরামপুর উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আঃ করিম। প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আয়ুব আলী খান, উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ‘আমরা চাই সকলকে মানুষ হিসাবে দেখতে, কাউকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা ছোট করে নয়। আমরা সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি বলে সম্মান দেব। আমরা সকলকে নিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে চাই, কাউকে পিছনে রেখে নয়। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিগণ পরিবারে ও সমাজের বোঝা নয়। তাদেরকে কর্মমূখী প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে পারি।’ তারা জানান, সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের শিক্ষা ও চিকিৎসায় কাজ করে আসছে। হরিরামপুরে বারসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক বৈষম্য রোধে ও সামাজিক মর্যাদা প্রাপ্তিতে কাজ করছেন। বিভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের আয় বর্ধনে বাড়িতে শাকসবজি চাষ ও ছাগল, হাঁস মুরগি পালনে উৎসাহী দিয়ে ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকার ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের প্রতিবন্ধীতা চিহ্নিত করে কার্ড, ভাতা, শিক্ষা ও চিকিৎসা দিয়ে সহযোগিতা করছে। পারিবারিকভাবে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের আরো যত্নবান হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কর্মকারকান্দি গ্রামের আছমা আক্তার বলেন, ‘বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ হিসাবে আমাদের সংগ্রাম একটু বেশি করতে হয়। পরিবার থেকে লাঞ্চনা ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়। সমাজে আমাকে প্রতিবন্ধী হিসাবে চিনে। অন্য মানুষের মত প্রতিবন্ধী মানুষের দাম নেই। যার কারণে আমি মনের দিক দিয়ে ছোট, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মনে আমি কাজটি পারব না। তবে আমি বাড়িতে শাকসবজি চাষ করি। ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন করি। এইগুলো বাজারে বিক্রয় করে টাকা সংগ্রহ করি ও কাজে লাগাই। বাড়িতে রান্না বান্না সকল কাজ করে থাকি। জীবন যুদ্ধে আমরা বেঁচে আছি, তবে আরো ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাই। প্রয়োজন সকলের সহমর্মিতা, সকলের ভালোবাসা ও সহযোগিতা।’
আমরা সকলে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীতা কমাতে পারি। বর্তমানে রাস্তা ঘাটে তুলনামূলক বেশি দুর্ঘটনার কারণে অনেকেই প্রতিবন্ধীতার শিকার হয়। তবে প্রতিবন্ধী মানুষ হিসাবে বৈষম্যের শিকার আর নয়। সমতা ভিক্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক।