মানিকগঞ্জে কৃষকদের উদ্যোগে ধান বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন
সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
রকমারি ধানের চালের ভাতের স্বাদ গুণ ছিল ভিন্ন। কৃষকগণ এ সকল ধান ফলাতে উঁচু, মাঝারি, নিচু জমির ধরন অনুযায়ী ধান চাষ করতেন। সবচেয়ে কম খরচে নিজস্ব বীজ, গরু দিয়ে জমি চাষ, গোবর সার ও বৃষ্টির পানি ব্যবহারে ধান চাষ হতো মাঠে মাঠে। কৃষকের মনের মতো করে স্বাধীনভাবে চাষ করতেন। কৃষকের হতে ছিল বিভিন্ন ধরনের ধান বৈচিত্র্য। অগ্রহায়ণে নবানের উৎসবে বিভিন্ন ধরনের ধানের চাল দিয়ে তৈরি হতো ভাত, পিঠা, পায়েস, খই, মুড়ি, খিচুরি ইত্যাদি। সবই বাঙালিদের রসনা প্রিয় খাবার। এই সকল খাবার তৈরিতে প্রয়োজন বৈচিত্র্যময় ধান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন ধরনের ধান খুবই প্রয়োজন। এসব ধান ফিরিয়ে আনতে মানিকঞ্জ সদরের বরুন্ডি কৃষক কৃষাণি সংগঠন ও বারসিক যৌথ উদ্যোগে ১৫১ জাতের ধান সংরক্ষণ ও এলাকা উপযোগি ধানের জাত বাছাই এবং উন্নয়নে প্রায়োগিক গবেষণা করছে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের বরুন্ডি গ্রামে বারসিক ও বরুন্ডি কৃষক কৃষাণি সংগঠন যৌথ উদোগে জৈব উপায়ে প্রায়োগিক ধান গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উক্ত প্রায়োগিক ধান গবেষণার মাধ্যমে আউশ, আমন, বোরো মৌসুমের ১৫১ জাতের বৈচিত্র্যের ধান রয়েছে। কৃষক সংগঠন ও কৃষকদের অংশগ্রহণে প্রায়োগিক গবেষণা প্লট থেকে এলাকা উপযোগি ধানের জাত বাছাই করেন। কৃষকগণ ধান জাত বাছাই ও ব্রিডিং করে ধানের জাত উন্নয়ন করেন। কৃষক সংগঠন প্রতি মৌসুমে ধানের জাতগুলো চাষ করে সজীব রাখেন। কৃষকগণ এলাকার উপযোগি পানি সহনশীল, খরা সহনশীল, রোগ বালাই প্রতিরোধি ধানের জাত বাছায়ে গবেষণা প্লট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁরা নতুন ধানের জাত সংগ্রহ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। স্থানীয় কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে প্রায়োগিক ধান গবেষণার প্লটে মাঠ দিবস করে তথ্য আদান প্রদান করেন। কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রায়োগিক ধান গবেষণা প্লটের ধান বীজ বর্ধন বা বিনিময় করা হয়।
বরুন্ডি কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সদস্য গোসাই দাস রায়ের নিকট জানা যায়, ধান গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে মানিকঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের কৃষক বিভিন্ন ধরনের ধান বীজ নিয়ে চাষ করছেন। জৈব উপায়ে ধান চাষের তথ্য আদান প্রদান করায় কৃষক নিজস্ব উপায়ে চাষ করে স্বনির্ভর হয়েছেন। বিভিন্ন গ্রামের কৃষকগণ নিজস্ব উপায়ে প্রায়োগিক ধান গবেষণা করে ধানের জাত বাছাই করছেন। বরুন্ডি গ্রামের কৃষকদের উদ্যোগ দেখে ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে অন্যান্য গ্রামের চাষিগণ চাষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মানিকগঞ্জ নিচু এলাকা হওয়ায় হঠাৎ বর্ষার পানি সহনশীল ধানের জাত বাছাই করেন ”কাইশ্যাবিন্নি’ ধান। নিচু জমিতে ডিপ ওয়াটার রাইস হিজল দিঘা, দিঘা, মোল্লা দিঘা ধান চাষ করেন। সরু জাতের রাজভোগ, কালোজিরা ধান বাছাই করে চাষ করছেন। কৃষকগণ মুড়ি, খই, চিড়া, পিঠার জন্য হিজল দিঘা, কাইশ্যাবিন্নি, মধুশাইল, শিশুমতি, দিঘা ধান চাষ করেন। গবেষণার মাধ্যমে আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকগণ নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে এলাকা উপযোগী ধান বাছাই করে মকবুল, কাইশ্যাবিন্নি, রাজভোগ, পুইট্যা আইজং, চিনিগুড়া, মনিশাইল ধান। কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া যায় মকবুল ধান চাষ করে। কৃষক পর্যায়ে ধান চাষ ও বিনিময় করে জাতবৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক হয়।
কৃষকগণ প্রায়োগিক ধান গবেষণার মাধ্যমে এলাকা উপযোগী ও দুর্যোগ সহনশীল বিভিন্ন জাতের ধান বাছাই করে চাষ কৃষকদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক পর্যায়ে গবেষণা করে মাঠে ধানবৈচিত্র্য বৃদ্ধিসহ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে। স্থানীয় ধান জাতের সবচেয়ে ভালো গুণ হলো বেশি পানিতে হয় ও কম পানিতে হয়, কৃষকদের ধান চাষে নিরাশ হতে হয় না। কৃষক নিজে বীজ সংরক্ষণ করতে পারেন।