ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষ খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন

ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষ খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন

রাজশাহী থেকে তহুরা খাতুন লিলি
রাজশাহীতে ছোট ছেট এই রকম শতাধিক বস্তি রয়েছে। যারা দিন এনে দিন খায়। রাজশাহীর বড় বস্তিগুলোর মধ্যে নামেভদ্রা বস্তি, জামালপুর বস্তি, শ্রীরামপুর বস্তি, বহরমপুর বস্তি রয়েছে। এদের ছোট জায়গায় পতিত জমির ব্যবহার হতো না। বারসিক এসব এলাকায় কাজ শুরু করে। বীজ বিনিময় করে। বস্তিবাসীদের সবজি চাষে আগ্রহী করে তোলে। নিরাপদ খাদ্য নিয়ে আলোচনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন বস্তিতে বীজ বিনিময় বেড়েছে, সবজি চাষ বেড়েছে। ভূমিহীন মানুষ তার বাড়ির সামান্য জায়গা ব্যবহার করে ফসল ফলাচ্ছেন।


নামোভদ্রা বস্তির ওবিয়া বেগম। তিনি তার সামান্য জায়গায় লাউ, শিম, লেবু, পেঁপে, আলু ও মিষ্টি কুমড়া চাষ করে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিক্রি করেও সংসার চালাচ্ছেন। তিনি জানান লাউ বিক্রি করে তার এক বছরে প্রায় ১১ হাজার টাকা আয় করেছেন। এছাড়া নিজে তো খেয়েছেনই। সবজি বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি তাঁর মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালান। অন্যদিকে একইভাবে নামোভদ্রার গোলাপী বেগম লাল শাক, মরিচ, শিম চাষ করে চাহিদা পূরণ ও বিক্রি করছেন। তিনি সবজি চাষ করে যেমন তাঁর বসতভিটার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন ঠিক তেমনি সবজি চাষ করে নিজের সবজি চাহিদা পূরণ করেছেন। এছাড়া বাড়তি সবজিগুলো বিক্রি করে আয়ও করেছেন। অন্যদিকে রাজশাহীর বহরমপুর এলাকার শেফালী। তিনিও তাঁর সামান্য জায়গা শাক, লাউ চাষ করে নিজেদের সবজি চাহিদা পূরণ করছেন। এভাবেই ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষ খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পেরেছেন। এতে তাদের ঘরের চালের ওপর সবজি থাকায় তীব্র তাপদাহের প্রকোপটাও কিছুটা কম হয় বলে তারা জানান।


উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন-হ্যাবিটেটের সংজ্ঞা অনুসারে, বস্তি হল কোনো শহরের ভগ্নদশাগ্রস্ত এলাকা, যার বৈশিষ্ট্য হল নিম্নমানের বসতবাড়ি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং স্থায়ী নিরাপত্তার অভাব। বস্তির বৈশিষ্ট্যগুলি বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হয়। তবে সাধারণত অতি দরিদ্র ও সামাজিক অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষেরাই বস্তিতে বাস করেন। বস্তির বাড়িগুলোও বিভিন্ন প্রকারের; কোথাও এগুলো অবিন্যস্ত কুটিরমাত্র, কখনও স্থায়ী ও পাকা ইমারত। অধিকাংশ বস্তিতেই পরিষ্কার জল, বিদ্যুৎ, শৌচাগারের সুবিধা ও অন্যান্য মৌলিক পরিসেবার অভাব পরিলক্ষিত হয়। বস্তি সৃষ্টির নানাবিধ কারণ আছে। বিশেষ করে ভৌগোলিক অবস্থান, সমাজ, অর্থনীতি এই ব্যাপারগুলোর উপর বস্তি সৃষ্টি নির্ভর করে। সাধারণ ব্যাপারগুলোর মধ্যে অধিক হারে শহরমূখি হওয়া, নগর পরিকল্পনাবিদদের অব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য, অধিক বেকার সংখ্যা, অপরিকল্পিত অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং গৃহযুদ্ধ এই ব্যাপারগুলোর কারণেও বস্তি সৃষ্টি হতে পারে।

happy wheels 2

Comments