সাম্প্রতিক পোস্ট

সঠিক জায়গা নির্ধারণে অধিক ফসল পাওয়া যায়

সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে চম্পা মল্লিক
জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ বাংলাদেশের উপকূলীয় কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলের অসংখ্য কৃষি পরিবারের জন্য চরম বাধা । শত প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে উপকূলীয় কৃষি পরিবারের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন অনেক কৃষি পরিবার। তেমনই এক কৃষি উদ্যোক্তার নাম সরমা রানী মন্ডল (৪৮)। উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে আধুনিক কৃষির এক মডেল হল এই সরমা রানী। স্বামী বিমল মন্ডল (৫৮) ও এক ছেলেসহ পরিবারে সদস্য সংখ্যা তিনজন। সংসার চলে মূলত কৃষি কাজ করে। নিজ হাতে তিনি কৃষি কাজ করেন একই সাথে স্বামী ও সন্তান তার এই কাজে সহযোগিতা করেন।

১৫ কাঠা বসতভিটা ও এক বিঘা বিলান জমিতে কৃষিকাজ এবং বাড়িতে বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি, ফল ফুল লাগাতেন সরমা রানী। তবে ২০১৭ সালে বারসিক’র সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি তার শাকসবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধি গাছ, একটি নারী সংগঠন ও নতুুুুুুুুুুুুুুুুুন নতুন পদ্ধতিতে ফসল চাষে বৈচিত্র্য বাড়াতে থাকেন। সেই সাথে তিনি অন্যান্য নারীদেরকে তার মতো করে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। তার বসতভিটা অত্যন্ত নিচু হওয়ায় তিনি বস্তা পদ্ধতিতে, টাওয়ার পদ্ধতিতে, পলিথিনের মধ্যে, দইয়ের মালসার মধ্যে এমনকি ভাঙ্গা বালতির মধ্যে ও সুন্দরভাবে সবজি লাগান। এসব পাত্রের মধ্যে ৫-৬ বছর আগের গাছ এখনো বেঁচে আছে। তিনি সারাবছর মৌসুম ভিত্তিক কুশি, ঝিঙ্গা, তরুল, সীম, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, ঢেড়ষ, কামরাঙা, বেগুন, ঝাল, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, ওল, হলুদ, কচুরমূখী, উচ্ছে, লাউ, কলমীশাক,মূলা, ওলকপি, বাঁধাকপি, বীটকপি, আলু, ও ধান সবজি/ফসল চাষাবাদ করেন এবং তার বাড়িতে সব ধরনের বীজ সংরক্ষণ করেন।


সরমা রানীর বসতভিটায় দেড় কাঠা জায়গা ডোবা ছিলো। তার অনেক ইচ্ছা ছিলো জায়গাটা ভরাট করার। কারণ তার বিশ^াস ছিলো, কোনরকমে জায়গাটা ভরাট করতে পারলে এবং ওই জায়গা উপযোগী সবজি চাষ করলে তিনি সফল হবেন। কেননা তিনি তার ভিটার ছায়া, রৌদ্র প্রতিটি জায়গাই ব্যবহার করেন। তাই তিনি বারসিক’র নিকট জায়গা ভরাটের জন্য আর্থিক সহযোগীতা চাইলে বারসিক থেকে ২০২৪ সালে তাকে জায়গা ভরাটের কাজে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছিলো। ফাঁকা, রৌদ্রপূর্ণ এবং নতুন মাটি হওয়ায় তিনি জানতেন এমন জায়গাতে কোন সবজি ভালো হয়। তাই তিনি ওই দেড় কাঠা জায়গার জন্য ১ কেজি চাষী আলুর ফল ও ২ কেজি কচুরমূখী কিনে লাগিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি ৪০ কেজি আলু, ১৫ কেজি আলুর ফল এবং ২০ কেজি কচুরমূখী পেয়েছেন। এই জায়গাতে তিনি কোনরকম রাসায়নিক সারের ছিটেফোটা ব্যবহার করেননি।


অন্যদিকে নিজ বাড়িতে তৈরি সম্পূর্ণ জৈব সারের মাধ্যমে তিনি এই সবজি লাগিয়েছিলেন। এই সবজি তিনি বিক্রি ও বিতরণের মাধ্যমে অনেক মানুষকে ধারণা ও দিয়েছেন ফসল উপযোগী জায়গা নির্ধারনের জন্য। একই জায়গাতে তিনি পরপর কয়েক রকমের সবজি লাগিয়েছেন এবং পুষ্টি চাহিদার পাশাপাশি বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছেন। বর্তমানে এই জায়গাতে শীতকালীন সবজি পালংশাক, বেগুন, ওলকপি, ফুলকপি থাকলেও এখান থেকে ১২ কজি ওলকপি বিক্রি, নিজেদের চাহিদা পূরণ ও প্রায় ১৪ কেজি ওলকপি আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন মানুষকে বিতরণ করে জায়গা কিছুটা ফাঁকা করেন এবং সেখানে আগেভাগে গ্রীষ্মকালীন সবজি মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙে, তরুল ও বরবটি লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোন কাজে সফলতার জন্য সেই কাজের প্রতি মায়া, মমতা, ভালোবাসার পাশাপাশি সঠিক ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

happy wheels 2

Comments