ছকিনা খাতুনের জীবন যুদ্ধ
সাতক্ষীরা থেকে মুকুন্দ ঘোষ
নারীরা আজ সময়ের ¯্রােতে আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে নানাভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তেমনই একজন উদ্যোগী নারী ছকিনা খাতুন। স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবন যুদ্ধে হার না মেনে দুই শিশু সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে চলতে থাকে তাঁর জীবন যুদ্ধ।
বাংলাদেশের একবারে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার মধ্যম খলিসাবুনিয়া গ্রামের নারী ছকিনা খাতুন (৪৫)। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া করা হয়নি। তাঁর বয়স যখন ১৬ বছর তখন বিয়ে হয় ৫০ বছরের মানুষের সাথে। ছকিনা খাতুনের দুই সন্তানের জন্মের পরে তার স্বামী মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পরে দিনমজুর দিয়ে অনেক কষ্টে সংসারের হাল ধরে দুই সন্তানকে বড় করছেন। বড় ছেলে জাহিদুল (২১) লেখাপড়া না করেই মায়ের কষ্ট লাঘবের জন্য বিয়ে করেছেন। ছোট ছেলে ফরিদ (১৪) দশম শ্রেণীতে পড়ে।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে মধ্যম খলিসাবুনিয়া গ্রামের মালঞ্চ সিএসও দলে যুক্ত হয় ছকিনা খাতুন। যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিয়মিত সাপ্তাহিক সভায় অংশগ্রহণ করেন। সাপ্তাহিক আলোচনা থেকে ও জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা প্রশিক্ষণ পেয়ে ী প্রভাবিত হন। পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে তাঁকে দুটি ছাগল, দু’টি ফল গাছ কিছু সবজি বীজ ও পাঁচ টি হাঁস সহযোগিতা করা হয়। এরপর বারসিক এর নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তাঁর পারিবারিক আয় বাড়াতে উৎপাদনশীল সম্পদগুলোকে ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছেন।
ছকিনা খাতুন নিজের মাত্র ৫ শতক বসতভিটায় নানা জাতের শীতকালীন সবজিও চাষ করেছেন, যা কিনা পরিবারের আংশিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে। ছকিনা খাতুন লবণাক্ত পরিবেশের মধ্যেও কৃষি কাজের পাশপাশি দেশীয় হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। প্রতিমাসে তিনি ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার ডিম বিক্রি করেন, যা দিয়ে তিনি পরিবারের ব্যয়ের পাশাপাশি ছেলের পড়ালেখার কাজে লাগান। সখিনা খাতুন তার সামগ্রিক কৃষি উদ্যোগের মাধ্যমে নিজের পরিবারটাকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করতে চান ও ছেলেটিকে উচ্চশিক্ষিত করতে চান।
বর্তমানে ছকিনা খাতুনের বাড়িতে ৪টি ছাগল ও ১২টি দেশীয় হাঁস আছে। বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে সম্পদ সহযোগিতা পাওয়াতে বারসিক’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।