সাম্প্রতিক পোস্ট

পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চায় নবিরনের সাফল্য

হরিরামপুর মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
হরিরামপুর চরের নটাখালা গ্রামে বসতবাড়ি বাগান সবজি চাষের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে নবিরনের সাফল্য। মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন চরাঞ্চলে নটাখোলা গ্রামে বসতি। ৫ বছর আগে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে স্বপরিবারে নটাখোলা গ্রামে এসে বসতি শুরু করেন নবিরন। তার স্বামীর নাম জয়নাল হোসেন। তিনি একজন দিনমজুরী কৃষক।
একমাত্র স্বামীর আয় রোজগার দিয়ে কোন রকমে নবিরনের পরিবার চলছিল। বর্তমানে সবকিছু দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শুধু স্বামীর আয় দিয়ে সংসারা চালানো কষ্ট হয়ে যায়। নবিরন নিজে নিজে ভাবেন কিভাবে পরিবারের খরচ কমানো যায়। স্বামীর পাশাপাশি আয়বর্ধনমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য তিনি তাঁর বসত বাড়িতে ১০ শতক জায়গায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।


তাঁর এ সিদ্ধান্ত বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য বিভিন্নজনের সাথে আলোচনা করনে, সহযোগিতা চান। এভাবে এক পর্যায়ে বারসিক সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন। বারসিক’র সহযোগিতায় এলাকায় গড়ে উঠা নটাাখোলা নারী উন্নয়ন সংগঠনের সাথে নবিরন যুক্ত হন। তিনি এরপর থেকেই বারসিক থেকে পারিবারিক সবজি চাষ ও পৃুষ্টি বাগান তৈরি করার বিষয়ে নানান পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা লাভ করেন। এছাড়া পারিবারিক বাগানের পাশাপাশি তিনি বসতবাড়িতে হাঁস, মুরগি পালনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করনে বারসিক ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এভাবে নবিরণ নিজেকের তৈরি করেন। পারিবারিক পুষ্টি বাগান করার জন্য তিনি সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় ফসলের বীজ সংগ্রহ করেন এবং এসব বীজে চাষবাসের নানান পরামর্শ গ্রহণ করেন। এভাবে তাঁর একাগ্রতা ও পরিশ্রমের ফলে পারিবারিক পুষ্টি বাগানে তিনি সফলতা লাভ করেন। তাঁর এ সাফল্য মূল্যায়ন করে বারসিক নবিরনকে শতবাড়ির কৃষক হিসেবে যুক্ত করে।
বারসিক এ শতবাড়ির মডেলের মাধ্যমে নারীদের নানানভাবে সহযোগিতা করে যাতে করে তারা তাদের সম্পদ (জমির) সর্বোচ্চ ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ফসল উৎপাদন করেন। এই শতবাড়ির মডেলে যারা যুক্ত তাদেরকে বারসিক কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা চর্চা, ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি এবং বীজ সংরক্ষণসহ নানান বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং প্রয়োজনসাপেক্ষে স্থানীয় বীজসহ এককালীন উপকরণ সহযোগিতা করে। নবিরণ এই শতবাড়ি মডেলে যুক্ত হওয়ার থেকে এ ধরনের সহযোগিতা পেয়ে যাচ্ছেন, যা তাঁর কাজকে আরও গতিশীল করছে।
এভাবে নবিরণ মাচা তৈরি করেসেখানে লাউ, চাল কুমড়া, বেগুন, ধুন্দল ও মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। এই পুষ্টি বাগান থেকে পারিবারিক খাবারের চাহিদা পূরণ করার পর উদ্বৃত্ত্ব ফসল বাজারে বিক্রি করে প্রতিমাসে কিছু টাকা আয় বরেন, যা তিনি সঞ্চয় করেন। এই সঞ্চয়ের টাকা দিয়েই তিনি পরবর্তীতে নিজের ঘরে বারান্দায় শিশু খাদ্যসহ বিস্কুট ও চানাচুর দোকান শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি চাহিদা ভিত্তিতে চাল, ডাল, তেল ও লবন বিক্রি শুরু করেন। এভাবে বর্তমানে তিনি একটি ছোট দোকানের মালিক। সেই দোকানের আয় থেকে স্বচ্ছলতার সাথে সংসার চালাচ্ছেন। এলাকায় তিনি এখন একজন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত।
নিজের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ফসল উৎপাদন করে নবিরণ তাঁর সংসারের আর্থিক সমস্যা যেমন সমাধান করেছেন ঠিক তেমনি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনসহ পরিবেশবান্ধব কৃষি অনুশীলন করে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরবে অবদান রাখছেন।

happy wheels 2

Comments