হারিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক সময়ের জনপ্রিয় বাহন সাইকেল হেলিকপ্টার
সাতক্ষীরা থেকে আসাদুল ইসলাম ও ফজলুল হক
হেলিকপ্টার শুধু আকাশ পথে নয় স্থলপথ দিয়েও চলে। আর তা এখনো চলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরাতে। ষাটের দশকে এই অঞ্চলের জনপ্রিয় এই বাহনটি আজ যান্ত্রিকতার ছোয়ায় বিলুপ্তির পথে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরার একসময়ের জনপ্রিয় পরিবহন এই সাইকেল হেলিকপ্টার। আকাশ পথের হেলিকপ্টারে যেমন এক স্থান থেকে দ্রুত অন্য স্থানে যাওয়া যায়। দ্রুত না হলেও দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার একমাত্র সহজলভ্য ও জনপ্রিয় পরিবহন ছিল সাইকেল হেলিকপ্টার।
সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে গদি বা নরম কিছু দিয়ে বসার ব্যবস্থা করে একজন মানুষ বহনের ব্যবস্থাই মূলত সাইকেল হেলিকপ্টারের কাজ। শুধু পেছনের ক্যারিয়ারে যাত্রী বহন করা হয় না; বিশেষ ব্যবস্থায় সামনের রডে আরো একজন যাত্রী বহন করা হয়।
ষাটের দশকের দিকে এই পরিবহনের সূত্রপাত হয়। বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাইকেল হেলিকপ্টার চলতো বেশি। সেই সময় বাহন হিসেবে এই অঞ্চলে সাইকেল হেলিকপ্টার খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই পেশায় যুক্ত হয় বহু লোক। হাটবাজার, গুরুত্বপূর্ণ স্থান, রাস্তার মোড়, সর্বত্র ছিল হেলিকপ্টার নিয়ে চালকের আনাগোনা। যাত্রী বহনের অন্যতম মাধ্যম ছিলো এই হেলিকপ্টার। প্রত্যন্ত এলাকায় দ্রুত যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিলো এটি। কিন্তু সেদিন আর নেই। সাইকেল হেলিকপ্টার এখন আর তেমন দেখা যায় না।
মোটর সাইকেল, বাস, ইঞ্চিন চালিত ভ্যানগাড়ি প্রভৃতির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ সমস্ত যানবাহনের সাথে টিকে থাকতে না পেরে সাইকেল হেলিকপ্টার চালকেরা অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। আর যারা আছেন সারাদিন অপেক্ষা করেও যাত্রী পান না। এখন শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ অঞ্চলের গ্রামের রাস্তায় ২/৪ খানা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যার ফলে এই বাহনটি আজ বিলুপ্তির পথে।
শ্যামনগর উপজেলার দক্ষিণ হাজিপুর দীঘির পাড় গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, তিনি প্রায় ২৮ বছর যাবত এই সাইকেল হেলিকপ্টর চালান। আগে সাইকেল হেলিকপ্টর খুব কদর ছিলো। রাস্তায় ভ্যান আর হেলিকপ্টর ছাড়া আর তেমন কিছু চলতো না। আয়ও ছিলো অনেক। দিন দুইশ থেকে তিনশ টাকা আয় হতো। আর এখন একশ টাকাও হয় না। এমনও দিন আছে যে মোটে আয় হয় না। কিন্তু আদি পেশা ছাড়তে পারছেন না। তিনি আরো জানান, এ পেশায় আগে অনেকে ছিলো কিন্তু এখন চলে না বলে অন্য পেশায় চলে গেছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার বেলেডাঙ্গা গ্রামের আয়ুব গাজী বলেন, “ছোট বেলায় দেখেছি গ্রামের রাস্তায় দু-একটা ভ্যান আর বেশির ভাগ সাইকেল হেলিকপ্টার চলতে। বাবার সাথে ছোট বেলা হেলিকপ্টারে খুব মজা করে চড়তাম। বাবা পেছনে আর আমরা ছোটদের সামনে বসিয়ে দিয়ে চালক চালাতেন। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো এই হেলিকপ্টার। কিন্তু আজ তেমন আর এটি দেখা যায় না। যা দু-একটা দেখা যায় তাদের ভাড়া হয় না। এখন মানুষ এতে খুব কম ওঠে। কেউ কেউ শখের বশে এতে ওঠে।