হরি ধানের উদ্ভাবক হরিপদ কপালীর প্রতি শ্রদ্ধা
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামের একজন কৃষক হরিপদ কপালী। ধান জাতের বৈচিত্র্য সুরক্ষা ও নতুন জাত উদ্ভাবনে খোদ কৃষকের অবদানকে যিনি পুনরায় প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তাঁর উদ্ভাবিত এক উচ্চফলনশীল জাতের ধান ছড়িয়ে পড়ে আসাননগর গ্রাম থেকে বাংলাদেশের অনেক জমিতে। কৃষকেরাই এই ধানের নাম দেয় হরিধান। চাষ খরচ কম এবং উচ্চফলনশীল ও রোগপ্রতিরোধক্ষম এ ধানটি খুব কম সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান তাঁকে সম্মাননা জানায়। সকল তথ্য উপাত্তসহ সর্বজনের কাছে হরিধানের উদ্ভাবক হিসেবে হরিপদ কপালীর স্বীকৃতি ও ভালোবাসা মিললেও বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা কৃষি মন্ত্রণালয় তাঁকে এখনো হরি ধানের উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
১৪০৫ বাংলা সনে প্রথম ধানজমির আগাছা বাছতে গিয়ে হরিধানের ধানের চারা খুঁজে পান হরিপদ কপালী। ১৪০৬ সালে সংরক্ষিত একটি গাছের তিনটি বাইল থেকে সবগুলো ধান এক হাত জমিনে সরাসরি লাগানো হয়। ১৪০৭ সালে প্রথম এক বিঘা জমিনে এই ধান লাগানো হয়। ১৪০৮ সালে সাত আট বিঘা জমিনে এই ধান লাগানো হয়। গ্রামের মানুষ বীজ নেওয়া শুরু করে। ১৪০৯ সামাজিকভাবে গ্রামের মানুষ এই ধানটিকে হরি ধান নামে ডাকতে শুরু করে। গ্রামের পর গ্রামে এই ধান ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক জনকন্ঠ, প্রথম আলোসহ অন্যান্য পত্র পত্রিকা এবং বেসরকারি চ্যানেলগুলোতে হরিধান সম্পর্কে নানান রিপোর্ট প্রকাশের ভেতর দিয়ে গবেষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং রাষ্ট্রীয় মনোযোগ তৈরি হয় হরি ধানের প্রতি। বেসরকারি চ্যানেল আইতে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান দেখানো হয়। নারায়ণগঞ্জের শ্র“তি নামের এক সাংস্কুতিক সংগঠন গ্রাম থেকে হরিপদকে নারায়নগঞ্জ এনে সম্মাননা দেয়। গ্রাম ছাড়িয়ে এই ধান বিভিন্ন জেলাতে ছড়িয়ে পড়ে।
১৪১১ সালে বারসিক খুলনা বীজ সম্মেলন’১৪১১ এ তাঁকে বারসিক সম্মাননা প্রদান করে। ২০০৫ সালে Bangladesh Institute of Management (BIM)–এ বারসিক আয়োজিত জাতীয় বীজ সম্মেলন’১৪১১ উদ্বোধন করেন হরিপদ কপালী।
বিরল কৃষিজ্ঞানের অধিকারী এবং গ্রামবাংলার মাঠজমিন থেকে ওঠে আসা এই ধানউদ্ভাবক হরিপদ কপালী আজ ৬ জুলাই ২০১৭ ভোরে তাঁর নিজ বাড়ি আসাননগরে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, পুত্র, আত্মীয়-স্বজনসহ হরিধানের মতো এক আশা জাগানিয়া এক ধানজাত রেখে গেছেন।
বারসিক পরিবার এবং বারসিকনিউজ এই শতবর্ষী ধানশিল্পীর মৃত্যুতে শোকাহত। তাঁর আত্মার মঙ্গল কামনা করে বারসিক ও বারসিকনিউজ হরিপদ কপালীর মতো কৃষকদের সৃষ্টি ও উদ্ভাবনের স্বীকৃতি ও সম্মাননা দাবি করছে আবারও।