দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে নাহার গার্ডেন ও শিশু পার্ক
সাতক্ষীরা থেকে সোনিয়া আফরোজ
ব্যস্ত শহরের কোলাহলে দিন দিন মানুষের জীবনে ব্যস্ততা বেড়েই চলেছে। একঘেয়ে করে তুলেছে তাদের প্রাত্যহিক জীবন। এই একঘেয়েমী দূর করতে মানুষ মাঝে মাঝে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ফিরে আসে। ঘুরতে আসে গ্রামের কোলাহলমুক্ত নির্জন পরিবেশে। ঠিক এমনই প্রকৃতি-প্রেমী মানুষের জন্য নির্জন পরিবেশে গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম নাহার গার্ডেন ও শিশু পার্ক।
এখানে কেউবা আসে ঘুরতে আবার কেউবা আসে প্রিয়জনের সাথে একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে। কেউবা আসে আবার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। দূর-দূরান্ত থেকে শিশুরাও আসে শিশু কর্ণারের আনন্দ উপভোগ করতে। ইতোমধ্যে পার্কটি সৌন্দর্য প্রেমীদের মনে অনেকটাই জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিনিয়ত এখানে ভিড় জামচ্ছে দূর দূরান্ত থেকে আসা শতশত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ।
নাহার গার্ডেন ও শিশু পার্ক ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি মো. আজমল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠা করেন। পার্কটির নামকরণ করা হয় তার স্ত্রী নাহারের নামানুসারে। এটি উদ্বোধন করেন সাবেক জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান।
পার্কটিতে ঢুকলেই মনে হবে যেন আপনি একটি গহীন অরণ্যে প্রবেশ করছেন। এর কারণ গেট থেকে অফিস রুম পর্যন্ত বিভিন্ন রঙিন ও লতানো ফুল গাছ দিয়ে সাজানো। অফিস রুমের পাশেই রয়েছে একটা ছোট ঘর। এর মধ্যে রয়েছে কয়েকটি বাবুই পাখির বাসা।
এছাড়া অফিস রুমের সামনেই রয়েছে একটি বিশাল পুকুর। পুকুরের পরিবেশ বেশ চমৎকার। গ্রীষ্মের দিনে পুকুর পাড়ে বসলেই মৃদুমন্দ বাতাসে মন জুড়িয়ে যায়। পুকুরটিতে দুটি প্যাডেল বোর্টও রয়েছে। এতে চড়ে দর্শনার্থীরা পুকুরে ঘুরতে পারে। কখনো কখনো প্রেমিকযুগল এই বোর্টে করে পুকুরে ঘুরে বেড়ায়। যা দেখে অভিভূত হয় অনেকে।
এছাড়া পার্কটিতে রয়েছে শিশুদের জন্য একটি কর্ণার। এখানে শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু রাইডার। রাইডারে চড়ে শিশুরা অনেক আনন্দ পায়।
শিশু কর্ণারের পরেই রয়েছে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি সুন্দর টাওয়ার। এই টাওয়ার থেকে পুরো পার্কটিকে দেখতে খুবই চমৎকার লাগে। এছাড়া টাওয়ারটিতে বসার ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে বসে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করেন এক পলকে।
পুরো পার্কটিতে রয়েছে বিচিত্র ধরণের গাছ-গাছালি। বিশেষ করে রাবার, বেলী, বাগান বিলাস, বিভিন্ন প্রজাতির পাতা বাহার, দু-তিন প্রজাতির চাপা ফুল, ক্যাকটস, অ্যালমন্ড ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে অনেক বাহারি রঙের ফুল গাছ। যা দেখে দর্শনার্থীদের চোখ জুড়িয়ে যায়। এখানে আসলে জানতে পারে অনেক অজানা গাছের নাম। উপভোগ করতে পারে গাছগুলোর আসল সৌন্দর্য।
এছাড়া এখানে রয়েছে একটি ধানের গোলা, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বানর ও টার্কি মুরগি। টার্কি মুরগিগুলো বাইরে দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়। যা দেখে বড়রা ও শিশুরা আনন্দিত হয়। অ্যাকোরিয়ামের মত একটি অর্ধ ঘরে রঙিন মাছ খেলা করছে।
নাহার গার্ডেন ও শিশু পার্ক ঘুরতে আসা মো. মোকাররম হোসেন বলেন, “পার্কটির পরিবেশ খুবই শান্তিপূর্ণ এবং চমৎকার। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালো সময় কাটানোর মত সুন্দর পরিবেশ রয়েছে এখানে।”
পার্ক ঘুরতে আসা মো. খায়রুর রাঈদ নামে একজন বলেন, “গ্রামের মধ্যে এমন একটি সুন্দর পার্ক সচারচার দেখা যায় না। প্রকৃতি প্রেমী মানুষের জন্য এবং অবসাদগ্রস্ত মানুষের জন্য পার্ক একটি উত্তম স্থান।”
একান্ত আলাপকালে পার্কের মালিক মো. আজমল হোসেন বলেন, “আমার স্ত্রীর নামে নাহার গার্ডেন ও শিশু পার্কের নামকরণ করা হয়েছে। এটি সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মরাজপুর গ্রামে অবস্থিত। মূলত পার্কটি শিশুদের জন্য। তবে পার্কের পরিবেশ সম্পূর্ণ কোলাহলমুক্ত। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ আসে এই পার্কে ঘুরতে। বর্তমানে পার্কে শোভাবর্ধনের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে আরও কিছু নতুন সংযোজন করা হবে।” পার্কটিতে প্রবেশের শুভেচ্ছা মূল্য ২০ টাকা।
এটি আবার পিকনিক স্পট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আসে পিকনিক করতে। আরও আসে এখানকার সুন্দর মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে। সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ এখানে আসে কিছুটা ভালো সময় কাটানোর জন্য।
যেভাবে যাবেন: সাতক্ষীরা শহর থেকে খুব সহজেই নাহার শিশু পার্ক ও গার্ডেনে যাওয়া যায়। শহীদ আব্দুর রাাজ্জাক পার্কের দীঘি থেকে ভ্যানযোগে গিয়ে নামবেন ব্রহ্মরাজপুর বাজারে (ভাড়া ১০ টাকা)। ব্রহ্মরাজপুর বাজার থেকে কিছুদূর হাঁটলেই নাহার শিশু পার্ক ও গার্ডেন দেখা যাবে। আবার রাজ্জাক পার্ক থেকে নাহার শিশু পার্ক ও গার্ডেনে সরাসরি ভ্যানযোগেও যাওয়া যায়।