ফড়িং আমাদের পরিবেশ ভালো রাখে

চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু

পাবনার চাটমোহর-হান্ডিয়াল সড়কের বওশা ব্রীজ পার হবার পর থেকে রাস্তার দুপাশের বিলের বিস্তৃত জলরাশি আকৃষ্ট করে প্রকৃতি প্রেমীদের। এ রাস্তার দুপাশে চোখ মেলে তাকালে চোখে পরে হরেক রঙের ক্ষুদ্র জীব। কীট পতঙ্গ। রাস্তার পাশে ফড়িং প্রজাপতি ভ্রমরসহ অনেক প্রজাতির কীট পতঙ্গের ওড়া উড়ি মানুষের মনকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আলোড়িত করে। এক ভালো লাগার অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করে। বিশেষত হরেক রঙের ফড়িং দেখে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ান অনেকে। ব্যস্ত হয়ে পড়েন আগাছা ঘাস লতা পাতার উপর বসা ফড়িং এর ছবি তুলতে। কিন্তু ফড়িং বলে কথা। এ যে সব সময় থাকে অতি সতর্ক। মাথা ইচ্ছা মতো ঘোড়াতে পারে বলে কেউ এর কাছাকাছি যেতে না যেতেই ফড়িং উড়ে চলে যায় অন্য আগাছা ঘাস বা লতা পাতায়। ফড়িং লাল, সবুজ, হলুদ, কমলাসহ অনেক মিশ্র রঙের ও হয়ে থাকে। রং ও সৌন্দর্যে অতুলনীয় বৈচিত্র্যময় ফড়িং আমাদের মনকে করে আকৃষ্ট।

foring-1
ওডোনাটা বর্গভূক্ত এবং এপিপ্রোকটা উপ-বর্গের পতঙ্গ ফড়িং এর চোখ বেশ বড়। ফড়িং এর রয়েছে চারটি স্বচ্ছ পাখা। এ পাখনার সাহায্যে ফড়িং উড়ে বেড়ায়। প্রজাতি ভেদে ২৫ থেকে ৩৫ কিলো মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। লেজের দিকটা লম্বা ও চিকন। মাথা বেশ মোটা। ফড়িং এর ছয়টি পা থাকলেও এরা হাটতে পারে না। পায়ে ছোট ছোট কাটার মতো থাকে। এগুলোর সাহায্যে ফড়িং অনায়াসে ছোট ছোট ঘাস লতা পাতা খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বসতে পারে। মশা, পিঁপড়া, মাছি মৌমাছিসহ অন্যান্য ছোট ছোট পোকা মাকড় শিকার করে খায়। ফড়িং পানিতে জন্মে। পূর্ণ বয়ষ্ক ফড়িং পানিতে ডিম পারে এবং পানিতেই এর বাচ্চা (নিম্ফ) হয়। বাচ্চাগুলো বড় হয়ে ডাঙ্গায় উঠে আসে। তাই পানির কাছা কাছি ফড়িং বেশি দেখা যায়।

foring-2
বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন, শৈশব কৈশর কাটিয়েছেন তারা স্মৃতি হাতড়ালে অনেকের হয়তো মনে পরে যাবে ছোট বেলার ফড়িং ধরার কথা। পাবনার চাটমোহরের চরনবীন হামিদা মমতাজ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কম্পিউটার অপারেশন বিষয়ের প্রভাষক ফিরোজা পারভীন বলেন, “ফড়িং ধরার জন্য কাছাকাছি গেলেই ফড়িং উড়ে যেত। তাই ছোটবেলায় পাট কাঠির মাথায় আঠা লাগিয়ে দূর থেকে সন্তর্পণে ফরিঙের পাখনায় আঠা ভড়িয়ে দিয়ে কৌশলে ফড়িং ধরতাম। কিশোরী বেলায় এটাকে অন্যায় মনে না হলেও এখন অন্যায় বলে মনে হয়।” মির্জাপুর ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক এস এম আলী আহম্মেদ বলেন, “ছোবেলায় বন্ধুবান্ধব মিলে এক সাথে রোদের মধ্যে ফড়িং ধরতাম। ফড়িং ধরার জন্য যখন ফড়িং এর কাছাকাছি যেতাম তখন উড়ে যেত ফড়িং। এসময় মন খারাপ হতো। আবার ধরার চেষ্টা করতাম। অনেক সময় ফড়িং এর লেজ ধরলে কামড় দিত। এতে সামান্য ব্যাথা পেলেও মন খারাপ হতো না। কখনো পাখনা ধরে ফড়িং উড়িয়ে দিয়ে আনন্দ পেতাম।” এখনো অনেক কিশোর কিশোরী কৌতুহল বশত ও আনন্দ পেতে ফড়িং ধরে থাকেন।

foring-4

গবেষকদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ৫ হাজার ৭শ’ প্রজাতির ফড়িং দেখা যায়। আমাদের দেশে এক সময় শতাধিক প্রজাতির ফড়িং থাকলেও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ক্রমশই তা কমে আসছে। পরিবেশবান্ধব ছোট জীব ফড়িং ও এর বাচ্চা জলাশয়ের পোকা মাকড় ও মশার লার্ভা খেয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের পরিবেশকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। পূর্ণ বয়ষ্ক ফড়িং উড়ন্ত অবস্থায় শিকার করে। ফড়িং একাধারে বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষতিকর মশা দমন, ফসলের ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনেও ভূমিকা রাখে। জনশ্রুতি রয়েছে, যে এলাকায় যত বেশি ফড়িং সে এলাকার পরিবেশ ও তত ভালো। উপকারের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন দেশে ফড়িং সংরক্ষণ করা হয়। সৌন্দর্যের কারণে জাপানী শিল্পকলায় ফড়িং জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

happy wheels 2

Comments