কৃষকের চোখে সোনালি স্বপ্ন
মো. মনিরুজ্জামান ফারুক,ভাঙ্গুড়া (পাবনা) থেকে
সোনালি আঁশ নিয়ে কৃষকের স্বপ্ন নতুন নয়। ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশায় প্রতিবছর পাট চাষ করেন কৃষক। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন বর্ষার পানিতে খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরে ওঠে। সোনালি স্বপ্ন নিয়ে সোনালি আঁশ ঘরে তুলতে বেড়ে যায় কৃষক-কৃষাণীর ব্যস্ততা।
প্রতিবছরের মতো চলতি মৌসুমে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নতুন পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা। এখন চলছে পাটের আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর কাজ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডোবা ও বিলের পানির মধ্যে জাগ দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন কৃষক। শুধু কৃষক নয় এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা থাকায় কৃষকদের সাথে প্রতিবেশিরাও আঁশ ছাড়িয়ে দিয়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর আবাদ হয়েছে ৩৫৫ হেক্টর জমিতে। উপজেলার মধ্যে মন্ডতোষ ও পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পাটের চাষ করা হয়। এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১ বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। আর ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ পাট পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে বাজারে নতুন পাট ওঠতে শুরু করেছে। দামও ভালো।
উপজেলার শরৎনগর হাটে বিভিন্ন জাতের পাট বেচাকেনা হচ্ছে। তোষা জাতের পাট ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১শ’ টাকা আর মেচতা জাতের পাট ২ হাজার ৩শ’ থেকে ২ হাজার ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাট ব্যবসায়ী আবুল হোসেন ফকির বলেন, “এ বছর পাটের দাম ভালো। হয়তো কৃষক লাভের মুখ দেখতে পাবে।”
ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশায় উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক রাজু মন্ডল তিনি এ বছর প্রায় ৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। একই গ্রামের আব্দুল হাকিম মোল্লা তিনিও ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেন। জানা যায়, এক সময় এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ করা হতো। পাট চাষীদের সুবিধার্থে এখানে পৃথিবীর বৃহত্তম পাটকল আদমজীজুট মিলের পাটক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট ন্যায্য মূল্যে এ পাটক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করতো। এছাড়া এ অঞ্চলের উৎপাদিত পাট স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে খুলনা, নারায়গঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জুটমিলে বিক্রয় হতো।
কিন্তু বর্তমানে পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ও আদমজী জুট মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানে পাট চাষ কমে গেছে। তারপরও এলাকার কৃষকরা সোনালি আঁশের সুদিনের আশায় প্রতিবছর কিছু জমিতে পাট চাষ করে আসছেন। উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুস্থির চন্দ্র সরকার জানান, এলাকার কৃষকরা গো-খাদ্য চাষে ঝুঁকে যাওয়ায় ও পাটের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়াতে পাট চাষ কম হয়েছে। তবে বাজারে নতুন পাটের দাম পাওয়ায় কৃষক খুশি। আশা করা যায় আগামী মৌসুমে এলাকায় পাটের আবাদ বাড়বে।