চলনবিলে বিলুপ্তির পথে ‘ঢেঁকি’
ভাঙ্গুড়া, পাবনা থেকে মো. মনিরুজ্জামান ফারুক:
ও বউ ধান ভানে রে
ঢেঁকিতে পাড় দিয়া
ঢেঁকি নাচে বউ নাচে
হেলিয়া দুলিয়া
ও বউ ধান ভানে রে……।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি নিয়ে লেখা এ গানটিতে ঢেঁকির সাথে গ্রামীণ নারীর মধুর সম্পর্কের চিত্রটাই যেন ফুটে উঠেছে। এছাড়া ঢেঁকি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে রয়েছে নানা গান ও কবিতা।
ঢেঁকি ধান ভানা বা ফসল কোটার একটি যন্ত্র। জানা যায়, আগের দিনে চলনবিলাঞ্চলের ঘরে ঘরে ধান ভানাসহ গম, চিড়া, হলুদ, মরিচ প্রভৃতি শস্য কোটার জন্য এটি ব্যবহৃত হতো। বৃহত্তর এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছিল ঢেঁকি। ঢেঁকি রাখার জন্য ছিল ‘ঢেঁকি ঘর।
ভোর রাত থেকেই বাড়ির মেয়েরা শুরু হতো ধান ভানার কাজ। ঢেঁকির ঢাকুর-ঢেকুর শব্দে বাড়ির সবার ঘুম ভাঙতো। ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভানতো আর মনের সুখে গান গাইতো তারা। ঢেঁকিতে কে কতটা পাড় দিতে পারে- তাদের মধ্যে চলতো সে প্রতিযোগিতা। গ্রামীণ বধূদের আলতা রাঙা পায়ের স্পর্শে ঢেঁকিও যেন নেচে-গেয়ে উঠতো!
প্রতিবছর নবান্ন উৎসবে গ্রামাঞ্চলে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে চাল গুড়ো করার উৎসব পড়ে যেতো। চালের সে গুড়ো দিয়ে তৈরি করা হতো নানা রকমের পিঠা-পায়েশ। তাছাড়া ঢেঁকিতে ছাঁটাই করা চালের ভাত খেতে খুব সুস্বাদু ও স্বাস্থ্য সম্মত। এখন ঢেঁকি আর চোখে পড়ে না। আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোয়ায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন বিলুপ্তির পথে।