বাল্য বিয়েমুক্ত নগর চাই
রাজশাহী থেকে তহুরা খাতুন লিলি
বাল্য বিয়ে একটি অভিশাপ। একটি সামাজিক ব্যাধিও। জানা যায়, করোনাকালীন এই সময়ে বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে নিরবে-নিভৃতে বাল্য বিয়ের হার বাড়ছে! অভিভাবকরা গোপনে তাদের কিশোরী মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন বা দিচ্ছেন এখনও। করোনার কারণে লোকসমাগমের সুযোগ নেই বলে এসব বিয়ে হচ্ছে। করোনার কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি কমছে বলে এ বাল্য বিয়ের বেড়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেন অনেকে।
এটি এমনও না যে বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে অভিভাবকরা জানেন না। তারা জানেন তবে বিশ্বাস করতে চান না। মেয়েকে বিদায় দিতে পারলেই যেন তারা বেঁচে যান! কিশোরী মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এ বাল্য বিয়ে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সেদিকে তাদের নজর নেই। আমাদের সমাজব্যবস্থা এখনও মেয়ে ‘বোঝা’ হিসেবে দেখার প্রবণতা রয়েছে। ফলশ্রæতিতে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলেই তারা যেন মনে করেন তাদের দায়িত্ব পালন শেষ হয়ে যায়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার এ কালো থাবা থেকে কিশোরী মেয়ে বা নারীকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাল্য বিয়ে বন্ধ ও নিরুৎসাহিত করার জন্য বারসিক কাজ করে যাচ্ছে। তারাই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি রাজশাহী শহরের ‘ইচ্ছা থেকে শুরু’ সংগঠনের উদ্যোগে এবং বারসিক’র সহযোগিতায় নগরের ১১নং ওয়ার্ড হেতেম খাতে ‘বাল্য বিয়ে মুক্ত নগর চাই’ শিরোনামের আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় বাল্য বিয়ের শিকার একজন তরুণী বলেন, ‘আমার ক্লাস সেভেনে থাকতে বিয়ে হয়। ছোট বয়সে কিছু বুঝতাম না। তাই সংসার কি বুঝতাম না। এইজন্য অশান্তি লেগেই থাকতো। কখনো মানসিকভাবে শান্তিতে থাকতে পারতাম না। আবার সংসারের দিকগুলো বুঝতাম না বলে শিকার হতে হয়েছে অনেক শারীরিক নির্যাতনেরও। বিশ বছরের আগে বাচ্চা হওয়াতে রক্ত ও পুষ্টিহীনতায় ভুগতে হয়েছে। যার প্রভাব এখনও এখনও টের পাচ্ছি।’
১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম তজু এ সময় বাল্য বিয়ের কুফল ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং বাল্যবিয়ে রোধ করা গেলে তার সম্ভাবনাগুলো আলোচনা করেন। তিনি উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বাল্য বিয়েকে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আমাদেরকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আমরা বাল্য বিয়ে করবো না, কোন বাল্য বিয়ের আয়োজনে সহযোগিতা করবো না, ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবো না এবং কোন বাল্য বিয়ে হলে প্রশাসনকে জানাবো। আমরা যদি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই তাহলে অবশ্যই বাল্য বিয়ে বন্ধ করা যাবে। এছাড়া অভিভাবকদেরকেও সচেতন হতে হবে।’ এ সময় উপস্থিত সবাই শপথ করেন যে, তারা বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে কাজ করবেন।
মতবিনিময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ‘ইচ্ছা থেকে শুরু’ সংগঠনের সভাপতি সাবরিনা শারমিন হক ও সদস্যবৃন্দ এবং বারসিক’র প্রতিনিধিরা।