সাম্প্রতিক পোস্ট

কৃষকদের মাঝে ভার্মি কম্পোস্টের ধারণা পাল্টে দিয়েছেন আ. হামিদ

কৃষকদের মাঝে ভার্মি কম্পোস্টের ধারণা পাল্টে দিয়েছেন আ. হামিদ

রাজশাহী থকেে অমৃত সরকার

মাত্র তিনবছর আগেও ভার্মি কম্পোষ্ট কি জানতো না রাজশাহীর তানোর উপজেলার প্রতান্ত বহড়া গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা। কোন কোন কৃষক টিভিতে দেখেছেন বা শুনেছেন ভার্মি কম্পোস্ট মাটির উপকার করে। কিন্তু কেউ স্ব-চোখে দেখেনি এটা কেমন জমিতে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু গ্রামের চলমান কৃষি চিন্তা থেকে ব্যতিক্রমী কৃষক মো. আ. হামিদ চিন্তা করেছেন ভার্মি কম্পোস্ট নিজ বাড়িতে তৈরি করবেন এবং তা জমিতে ব্যবহার করবেন। আ. হামিদ ব্যতিক্রমী কৃষক কারণ তিনি নিজের এলাকার কৃষি,মাটি পানি সম্পর্কে ভাবেন। তাই নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন ভার্মি কম্পোস্টের খামার যা মাটির প্রাণ হিসেবেও পরিচিত। আজ থেকে তিন বছর আগে চাঁপাই-নবাবগঞ্জ জেলার এক আত্মীয়র মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্টের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ওই আত্মীয়র মাধ্যমেই এক লাখ কেঁচো দিয়ে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের কাজ।

20171023_112440
কৃষিতে এলাকার সমস্যায় তিনি দেখেন পানিই বরেন্দ্র এলাকার সবথেকে বড় সমস্যা। সে জন্যই আজ থেকে দশ বছর আগেই বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সমস্যাকে মাথায় রেখে শুরু করেছিলেন বিভিন্ন রকম মৌসুমী সবজির বাণিজ্যিক চাষাবাদ। বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষের বিষয়টিকে বাঁকা চোখে দেখলেও আস্তে আস্ত আ. হামিদ নিজের পরিশ্রম দিয়ে সফলতা অর্জন করেছে। এখন বহড়া গ্রামের অনেক কৃষকই সারাবছর মৌসুমী সবজি চাষের সাথে সম্পর্কিত। এ সম্পর্কে পাশের গ্রামের মো. মতিউর রহমান বলেন, “আ. হামিদ আমাদের এলাকায় কৃষকদের প্রচলিত চাষাবাদের ধারণাই পাল্টে দিয়েছেন। কারণ আমরা কেউ ভাবতামই না যে, আমাদের এলাকায় সারাবছরই মৌসুমী সবজি চাষাবাদ করা সম্ভব। বর্তানে আমাদের গ্রামের ৭৫ জন কৃষক সারাবছর সবজি চাষ করছেন। পাশাপাশি পাশের বিল্লি, চোরখৈর, কুচিয়ামাড়া, আলেকছত্র গ্রামের ১৫০জন কৃষকে বিভিন্নভাবে সবজি চাষে সহযোগিতা করেছেন।

20171023_114638
দিনে দিনে ভার্মি কম্পোস্ট খামার থেকে সার উৎপাদন বেশি হতে থাকায় নিজের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নিজ গ্রামসহ পাশের নাচোল উপজেলার বকুলতলা, পূর্বলক্ষণপুর, নিয়ামতপুর উপজেলার গন্ধশাইল, ভেলকিপুর,তানোর উপজেলার কুচিয়ামারা, আলেকছত্র, বাউরিগ্রাম, বিল্লী, চোরখৈর, চাকইর গ্রামের কৃষদের মাঝে ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রয় ও ভার্মি কৃষকদের ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির বিভিন্ন বিষয় সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি বারসিকের সহায়তায় কৃষকদের ভার্মি কম্পোস্ট সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গ্রামে গ্রামে কৃষক সভা, আলোচনা করছেন। বারসিকের সহযোগিতায় নাচোল, গোদাগাড়ি, তানোর, পবা উপজেলার ১৭ জন কৃষক-কৃষাণী ভার্মি কম্পোস্টের সম্পর্কে আ. হামিদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজেরা এ সার করছেন। এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ি উপজেরার মো. বকুল মিয়া বলেন, “আ. হামিদের ভার্মি কম্পোস্ট কার্যক্রমে ব্যবহৃত কেঁচোগুলো দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং দ্রুত সার উৎপাদনে সক্ষম। আমি তাঁর কাছ থেকে এক হাজার কেঁচো নিয়ে এসে কাজ শুরু করেছি একমাস হলো। বর্তমানে আমার কেঁচো সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার হয়ে গেছে।

?

উল্লেখ যে, আ. ঘামিদ এক লাখ কেঁচো দিয়ে কাজ শুরু করলে তিন বছরের ব্যবধানে তাঁর কেঁচো সংখ্যা প্রায় পচিশ লাখ। তাঁর খামারে প্রতিমাসে ২০০ মণ গোবর ব্যবহার করে প্রতিমাসে ৬৬ মণ কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। এ বিষয়ে আঃ হামিদ বলেন, “প্রতি ১০০ কেজি গোবর থেকে ৩৩-৩৫ কেজি পরিমাণে সার উৎপাদন হয়। ভার্মি কম্পোস্ট কার্যক্রমের উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষ পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে ১০-১৫ জন নারী-পুরুষ কাজ করেন।” নিজের গরুর গোবর থেকে বর্তমানে চাহিদা মিটছে না বলে গ্রামের অন্য কৃষকদের থেকেও গোবর ক্রয় করে খামারে ব্যবহার করছেন। আ. হামিদ নিজের ধান, পেঁয়ারা, সীম, বেগুন, ওল, মরিচের জমিতে সব সময় ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করেন। পাশাপাশি নিজের এবং লিজ নেওয়া পুকুরের মাছের প্রধান খাদ্য হিসেবে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করেন। মাছ উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত অন্য কৃষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, “পুকুরে ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে মাছ চাষ করলে অন্য খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়না বললেই চলে।” নিজের চাহিদা মিিেটয়ে বর্তমানে আ. হামিদ সকল খরচ বাদ দিয়ে কেঁচো ও সার বিক্রয়ের মাধ্যমে বছরে চার লাখ পচাত্তর হাজার টাকা আয় করছেন বলে জানান। পাশাপাশি অন্য কৃষকরাও জমিতে ব্যবহারে জন্য প্রয়োজন মাফিক সার ক্রয় করে উপকার পাচ্ছেন। একজন আ. হামিদের উদ্যোগে কৃষির বর্তমান প্রচলিত ধারার পরিবর্তন ঘটছে, তাঁর উদ্যোগে উদ্যোগী হয়ে কৃষকরা পরিবশে, মাটি, ও পানির উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছেন।

happy wheels 2

Comments